ঢাকা ০৩:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ধর্ষণের বিচার দাবিতে উত্তাল ঢাকাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৬:০৪:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫ ১৩০ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

অপশক্তিকে পুনর্বাসন করতে জুলাই-আগস্টে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ রাস্তায় নামেনি। নির্যাতনের সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা চলছে। জুলাই-আগস্টের যে চেতনা, তাতে ধর্মীয়ভাবে অন্ধ, সামাজিকভাবে গোরা গোষ্ঠীর পুনর্বাসনের চেষ্টা ছিল না। অনেকেই এখন গর্ত থেকে বের হচ্ছে। এই সরকার ভিন্ন কিছু করবে, এমনটাই প্রত্যাশা ছিলো গণমানুষের। কিন্তু তা দেখা যাচ্ছে না।

রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ সমাবেশে এ কথা বলেন বক্তারা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক আয়োজিত এই সমাবেশে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ অংশ নেন। কয়েক দিন আগে বাংলাদেশের মাগুরায় আট বছরের এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে পরিবারের ভেতরেই। এঘটনায় তিনজনকে আটকরা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, গৃহ থেকে শুরু করে জনপরিসরে নারীকে নিপীড়ন করা হচ্ছে। পরিবারের ভেতর মেয়েদের আশ্রয় ভেঙে যাচ্ছে। নারী নির্যাতনের বিষয়টিকে স্বাভাবিক করা হচ্ছে, সাফাই গাওয়া হচ্ছে। এর আগে শনিবার মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যৗালয়ের পড়ুয়রা ধর্ষণকান্ডের বিচার দাবি করে সমাবেশ করেন।

একই ভাবে ঢাকার অদূরে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা মধ্যরাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে ক্যাম্পসে বিক্ষোভের পাশাপাশি সমাবেশ করেছে। গত কয়েকদিন যাবতই বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণকান্ডের কঠোর বিচার দাবি করে সভা-সমাবেশ করা হচ্ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষক সমাজ প্রতিবাদ সমাবেশ করলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশের অর্থনীতিতে নারীর ভূমিকা বাড়লেও গৃহ থেকে জনপরিসরে নারী নির্যাতন কমেনি।

সমাজ নারী নির্যাতনকে স্বাভাবিকীকরণ করছে। বিগত সরকারের সময় যে গোষ্ঠী নিপীড়নের শিকার হয়েছিল, তারাই এখন নারীর প্রতি ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠছে। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে।

এমন পরিস্থিতিতে ১৫ দিনে ধর্ষণের তদন্ত এবং ৯০ দিনে ধর্ষণের বিচার করার কথা জানালেন আইন উপদেষ্টাড. আসিফ নজরুল। রবিবার নিজ মন্ত্রকের সভাকক্ষে সাংবাদিক বৈঠকে এই ঘোষণা দেন দেন উপদেষ্টা। উপদেষ্টা বলেন, কিভাবে ধর্ষণ মামলার বিচার দ্রুত করা যায়, তা কাজ করছেন। ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত করে ৯০ দিনের মধ্যে ধর্ষণের মামলার বিচার সম্পন্ন করতে হবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। বাংলাদেশে ধর্ষকদের কোনো স্থান হবে না। মাগুরার ঘটনায় যারা অভিযুক্ত তাদের সবাইকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, ধর্ষণের শাস্তি পাওয়া অপরাধীও জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছে। নির্যাতন যাদের থামানোর কথা, তারা চোখ বন্ধ করে রেখেছে। শুধু ধর্মই নয়, নির্যাতক যখন যেটা সুবিধা মনে করে, সেটাই ব্যবহার করে। অধ্যাপক ফাহমিদুল হকের ভাষায় অন্তর্বর্তী সরকার দুর্বলতা প্রতিনিয়ত প্রকট হচ্ছে।

এর সুযোগ নিয়ে ছিনতাইকারী, ধর্ষক, ধর্মীয় লেবাসের লোকজন নারীর ওপর পুরোনো ফ্যাসিজম করছে। দুর্বল সরকারের সময় যে যার শক্তি প্রয়োগ করছে। শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। ৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক কর্মচারী দ্বারা মোরাল পুলিশিং ও যৌন নিপীড়নের শিকার হন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ধর্ষণের বিচার দাবিতে উত্তাল ঢাকাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

আপডেট সময় : ০৬:০৪:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫

অপশক্তিকে পুনর্বাসন করতে জুলাই-আগস্টে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ রাস্তায় নামেনি। নির্যাতনের সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা চলছে। জুলাই-আগস্টের যে চেতনা, তাতে ধর্মীয়ভাবে অন্ধ, সামাজিকভাবে গোরা গোষ্ঠীর পুনর্বাসনের চেষ্টা ছিল না। অনেকেই এখন গর্ত থেকে বের হচ্ছে। এই সরকার ভিন্ন কিছু করবে, এমনটাই প্রত্যাশা ছিলো গণমানুষের। কিন্তু তা দেখা যাচ্ছে না।

রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ সমাবেশে এ কথা বলেন বক্তারা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক আয়োজিত এই সমাবেশে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ অংশ নেন। কয়েক দিন আগে বাংলাদেশের মাগুরায় আট বছরের এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে পরিবারের ভেতরেই। এঘটনায় তিনজনকে আটকরা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, গৃহ থেকে শুরু করে জনপরিসরে নারীকে নিপীড়ন করা হচ্ছে। পরিবারের ভেতর মেয়েদের আশ্রয় ভেঙে যাচ্ছে। নারী নির্যাতনের বিষয়টিকে স্বাভাবিক করা হচ্ছে, সাফাই গাওয়া হচ্ছে। এর আগে শনিবার মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যৗালয়ের পড়ুয়রা ধর্ষণকান্ডের বিচার দাবি করে সমাবেশ করেন।

একই ভাবে ঢাকার অদূরে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা মধ্যরাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে ক্যাম্পসে বিক্ষোভের পাশাপাশি সমাবেশ করেছে। গত কয়েকদিন যাবতই বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণকান্ডের কঠোর বিচার দাবি করে সভা-সমাবেশ করা হচ্ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষক সমাজ প্রতিবাদ সমাবেশ করলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশের অর্থনীতিতে নারীর ভূমিকা বাড়লেও গৃহ থেকে জনপরিসরে নারী নির্যাতন কমেনি।

সমাজ নারী নির্যাতনকে স্বাভাবিকীকরণ করছে। বিগত সরকারের সময় যে গোষ্ঠী নিপীড়নের শিকার হয়েছিল, তারাই এখন নারীর প্রতি ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠছে। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে।

এমন পরিস্থিতিতে ১৫ দিনে ধর্ষণের তদন্ত এবং ৯০ দিনে ধর্ষণের বিচার করার কথা জানালেন আইন উপদেষ্টাড. আসিফ নজরুল। রবিবার নিজ মন্ত্রকের সভাকক্ষে সাংবাদিক বৈঠকে এই ঘোষণা দেন দেন উপদেষ্টা। উপদেষ্টা বলেন, কিভাবে ধর্ষণ মামলার বিচার দ্রুত করা যায়, তা কাজ করছেন। ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত করে ৯০ দিনের মধ্যে ধর্ষণের মামলার বিচার সম্পন্ন করতে হবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। বাংলাদেশে ধর্ষকদের কোনো স্থান হবে না। মাগুরার ঘটনায় যারা অভিযুক্ত তাদের সবাইকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, ধর্ষণের শাস্তি পাওয়া অপরাধীও জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছে। নির্যাতন যাদের থামানোর কথা, তারা চোখ বন্ধ করে রেখেছে। শুধু ধর্মই নয়, নির্যাতক যখন যেটা সুবিধা মনে করে, সেটাই ব্যবহার করে। অধ্যাপক ফাহমিদুল হকের ভাষায় অন্তর্বর্তী সরকার দুর্বলতা প্রতিনিয়ত প্রকট হচ্ছে।

এর সুযোগ নিয়ে ছিনতাইকারী, ধর্ষক, ধর্মীয় লেবাসের লোকজন নারীর ওপর পুরোনো ফ্যাসিজম করছে। দুর্বল সরকারের সময় যে যার শক্তি প্রয়োগ করছে। শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। ৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক কর্মচারী দ্বারা মোরাল পুলিশিং ও যৌন নিপীড়নের শিকার হন।