ঢাকা ১১:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকায় বিশ্বের সর্ববৃহত সরস্বতী পূজা ৭৪ মণ্ডপে বিদ্যাদেবীর আরাধনা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:৩৫:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ৩৫ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

অনিরুদ্ধ

মাঠের চারদিকে পূজামণ্ডপ। নানা রঙের এসব মন্ডপ ঘিরে ভক্তের ভিড় বাড়তে থাকে সেই সকাল থেকেই। বিভিন্ন মণ্ডপের সামনে কাগজ বিছিয়ে নানা বয়সের ভক্তরা যার যার মত বসে পড়েন। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ অনেক মণ্ডপের সামনে ভিড়। কুয়াচ্ছন্ন সকালেই হাজারো বক্তের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক জগন্নাথ হল মাঠ। এখানেই অনুষ্ঠিত হল বিশ্বের সর্ববৃহৎ সরস্বতি পূজা। মাঠে চারদিকে প্রায় ৭৪টি মন্ডপে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজা অর্চনা শেষে প্রায় আটটা নাগাদ শুরু হয় ভক্তের অঞ্চলি। সোমবার দেবী সরস্বতীর চরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে দেবীর আশীর্বাদ কামনা করবেন অগণিত ভক্ত। সরস্বতী বৈদিক দেবী হলেও এ পূজার বর্তমান রূপটি আধুনিককালে প্রচলিত হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মন্দির-পূজামণ্ডপ, বাসাবাড়িতে সাড়ম্বরে সরস্বতী পূজা হয়েছে। শিশুদের হাতেখড়িরও আয়োজন করা হবে।

ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের খেলার মাঠজুড়ে মন্ডপ। ৭৪ মণ্ডপে বিদ্যাদেবীর আরাধনা শুরু হয় সকাল থেকে। বিদ্যা ও সংগীতের দেবী সরস্বতীর কৃপা-লাভের আশায় ৭৪টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল। জগন্নাথ হলের মাঠে বাণী অর্চনা, আরতি ও ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলিতে সরস্বতীর আরাধনা করেন শিক্ষার্থীরা। একের পর এক মন্ডপের সামনে ভক্তের ঢল। স্বামী বিবেকান্দ’র মূর্তির পাশা দিয়ে হল খেলার মাঠে প্রবেশের শুরুতেই দেখা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মন্ডপ। এতো বড় পূজার আয়োজনে হাত লাগান সর্বধর্মের মানুষ।

ঢাকার অসম্প্রদায়িক চেতনা কতটা মজবুত তার প্রমাণ সর্ববৃহত সরস্বতী পূজা। হলের পুকুরের মাঝখানে ৪০ ফুট উচ্চতার সরস্বতীর দৃষ্টিনন্দন প্রতিমা তৈরি করেছে চারুকলা বিভাগ। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা করে থাকেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ভগবানের জ্ঞান ও বিদ্যার রূপ হলেন দেবী সরস্বতী। প্রতিবছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের শ্রী পঞ্চমী তিথিতে বিদ্যাদেবীর পূজা হয়। হাতে বীণা থাকে বলে সরস্বতীকে বীণাপাণিও বলা হয়। সাদা রাজহাঁস এ দেবীর বাহন। ঐতিহ্য অনুযায়ী এদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পুরোহিতের মন্ত্র পাঠের মধ্য দিয়ে বিদ্যাদেবীর মন্দিরে সন্তানদের প্রথম বিদ্যার পাঠের হাতেখড়ি দিয়ে থাকেন।

ঐতিহ্যগতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল এ পূজার মূল কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। জগন্নাথ হল ছাড়াও ছাত্রীদের জন্য বিভিন্ন হলে বীণাপাণির আরাধনায় বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজা উদযাপন হয়ে আসছে। প্রথমে শুধু ওই হলের শিক্ষার্থীরা পূজা উদযাপন করলেও পরবর্তী সময়ে এই পূজায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য বিভাগগুলোও অংশগ্রহণ করতে থাকে। জগন্নাথ হলের স্থায়ী উপাসনালয়ে প্রধান পূজা হয়েছে। ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনে দেবীর আরাধনা এছাড়াও সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, শাঁখারী বাজার, তাঁতি বাজার, বনানী ও রমনা কালী মন্দিরসহ মণ্ডপে মণ্ডপে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়। এদিন আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই পূজাকে ঘিরে ঢাক-ঢোল-কাঁসর, শঙ্খ ও উলুধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ঢাকায় বিশ্বের সর্ববৃহত সরস্বতী পূজা ৭৪ মণ্ডপে বিদ্যাদেবীর আরাধনা

আপডেট সময় : ০৪:৩৫:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

 

অনিরুদ্ধ

মাঠের চারদিকে পূজামণ্ডপ। নানা রঙের এসব মন্ডপ ঘিরে ভক্তের ভিড় বাড়তে থাকে সেই সকাল থেকেই। বিভিন্ন মণ্ডপের সামনে কাগজ বিছিয়ে নানা বয়সের ভক্তরা যার যার মত বসে পড়েন। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ অনেক মণ্ডপের সামনে ভিড়। কুয়াচ্ছন্ন সকালেই হাজারো বক্তের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক জগন্নাথ হল মাঠ। এখানেই অনুষ্ঠিত হল বিশ্বের সর্ববৃহৎ সরস্বতি পূজা। মাঠে চারদিকে প্রায় ৭৪টি মন্ডপে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজা অর্চনা শেষে প্রায় আটটা নাগাদ শুরু হয় ভক্তের অঞ্চলি। সোমবার দেবী সরস্বতীর চরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে দেবীর আশীর্বাদ কামনা করবেন অগণিত ভক্ত। সরস্বতী বৈদিক দেবী হলেও এ পূজার বর্তমান রূপটি আধুনিককালে প্রচলিত হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মন্দির-পূজামণ্ডপ, বাসাবাড়িতে সাড়ম্বরে সরস্বতী পূজা হয়েছে। শিশুদের হাতেখড়িরও আয়োজন করা হবে।

ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের খেলার মাঠজুড়ে মন্ডপ। ৭৪ মণ্ডপে বিদ্যাদেবীর আরাধনা শুরু হয় সকাল থেকে। বিদ্যা ও সংগীতের দেবী সরস্বতীর কৃপা-লাভের আশায় ৭৪টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল। জগন্নাথ হলের মাঠে বাণী অর্চনা, আরতি ও ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলিতে সরস্বতীর আরাধনা করেন শিক্ষার্থীরা। একের পর এক মন্ডপের সামনে ভক্তের ঢল। স্বামী বিবেকান্দ’র মূর্তির পাশা দিয়ে হল খেলার মাঠে প্রবেশের শুরুতেই দেখা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মন্ডপ। এতো বড় পূজার আয়োজনে হাত লাগান সর্বধর্মের মানুষ।

ঢাকার অসম্প্রদায়িক চেতনা কতটা মজবুত তার প্রমাণ সর্ববৃহত সরস্বতী পূজা। হলের পুকুরের মাঝখানে ৪০ ফুট উচ্চতার সরস্বতীর দৃষ্টিনন্দন প্রতিমা তৈরি করেছে চারুকলা বিভাগ। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা করে থাকেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ভগবানের জ্ঞান ও বিদ্যার রূপ হলেন দেবী সরস্বতী। প্রতিবছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের শ্রী পঞ্চমী তিথিতে বিদ্যাদেবীর পূজা হয়। হাতে বীণা থাকে বলে সরস্বতীকে বীণাপাণিও বলা হয়। সাদা রাজহাঁস এ দেবীর বাহন। ঐতিহ্য অনুযায়ী এদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পুরোহিতের মন্ত্র পাঠের মধ্য দিয়ে বিদ্যাদেবীর মন্দিরে সন্তানদের প্রথম বিদ্যার পাঠের হাতেখড়ি দিয়ে থাকেন।

ঐতিহ্যগতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল এ পূজার মূল কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। জগন্নাথ হল ছাড়াও ছাত্রীদের জন্য বিভিন্ন হলে বীণাপাণির আরাধনায় বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজা উদযাপন হয়ে আসছে। প্রথমে শুধু ওই হলের শিক্ষার্থীরা পূজা উদযাপন করলেও পরবর্তী সময়ে এই পূজায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য বিভাগগুলোও অংশগ্রহণ করতে থাকে। জগন্নাথ হলের স্থায়ী উপাসনালয়ে প্রধান পূজা হয়েছে। ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনে দেবীর আরাধনা এছাড়াও সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, শাঁখারী বাজার, তাঁতি বাজার, বনানী ও রমনা কালী মন্দিরসহ মণ্ডপে মণ্ডপে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়। এদিন আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই পূজাকে ঘিরে ঢাক-ঢোল-কাঁসর, শঙ্খ ও উলুধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ।