ডিসেম্বরে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে : ড. ইউনূস

- আপডেট সময় : ০৮:২০:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ৫৪ বার পড়া হয়েছে
অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু
অন্তর্বর্তী সরকারের পথচলায় বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন রয়েছে
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকরূপ দিতে জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হয়েছে, আর এই পথচলায় বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন রয়েছে। ড. ইউনূস বলেন, আজকে বহুল প্রতীক্ষিত একটা বৈঠকে একত্রিত হওয়াতে আমি আনন্দিত। বহুদিন ধরে যারা অপেক্ষা করছিলাম, দিন গুনছিলাম কবে আমরা বসবো। অন্তর্বর্তী সরকারের ছয়মাসের মাথায় ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের বৈঠকে এমন মন্তব্য করেন ইউনূস। ইউনূস বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব কাউকে চাপিয়ে দেওয়ার জন্য নয়। আমরা কেবল মাত্র সুপারিশগুলো নিয়ে এসেছি, আমরা শুধু সাচিবিক কাজগুলো আপনাদের করে দিলাম। এটা আমার কাজ না, এটা আপনাদের কাজ, যেহেতু আপনারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন। শনিবার বিকাল ৩টা নাগাদ ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ছয় সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বৈঠকে বসে। ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে।
ড. ইউনূস বলেন, আমাদের প্রতিজ্ঞা হলো আমরা যেন ছাত্র জনতার আত্মত্যাগের প্রতি অসম্মান না করি। যে কারণে তারা আত্মত্যাগ করেছিল, সেটা যেন পরবর্তী প্রজন্ম মনে রাখে। তাদের আত্মত্যাগকে স্বরণ করে, আত্মত্যাগকে সার্থক করার জন্য আমরা সবাই মিলে তাদের স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করব। সেটা নিয়েই আজকে আমাদের যাত্রা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এটি কমিশনের প্রথম বৈঠক। ড. ইউনূস বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব কাউকে চাপিয়ে দিতে নয়, আমরা কেবল মাত্র সুপারিশগুলো নিয়ে এসেছি, আমরা শুধু সাচিবিক কাজগুলো আপনাদের করে দিলাম। এটা আমার কাজ না, এটা আপনাদের কাজ, যেহেতু আপনারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন।

বৈঠকে রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশ্য করে ইউনূস বলেন, আপনাদের অভিজ্ঞতা, আপনারা যেহেতু বড় বড় রাজনৈতিক দলের নেতা, আপনাদেরকেই এই আইনগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। সেজন্য আপনাদের আলোচনা করার জন্য দেওয়া হবে। আলোচনার মাধ্যমে সুন্দর রাষ্ট্র গঠন করার বিষয়ে আশা প্রকাশ করে ড. ইউনূস বলেন, সুযোগটা আমরা সবাই জানি, এটাকে গ্রহণ করতে হবে, কাজে লাগাতে হবে। এটা প্রচন্ড সুযোগ, এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে পারি। সুযোগ কাজে লাগালে একটা সুন্দর দেশ পাওয়া যাবে। আমাদের তরফে কেবল মাত্র সুপারিশগুলো নিয়ে এসেছি। এক সঙ্গে আলোচনা করব, কমিশনের যারা আছেন তারা আপনাদের সঙ্গে বসবেন ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য, চাপিয়ে দেওয়ার জন্য না।
বৈঠকে ২৬টি রাজনৈতিক দলের ১০০ প্রতিনিধি অংশ নেন। তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত চলা দুই ঘন্টার বৈঠকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোট এবং মিত্র হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টিকে বাদ রেখে আমন্ত্রণ হয়। অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা, সংবিধান, বিচারবিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশে সংস্কারের প্রয়োজনে গঠিত ছয়টি কমিশন সংস্কারের সুপারিশসহ তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করেছেন। কমিশনের সুপারিশসমূহ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে সিদ্ধান্তে পৌছাতে ছয়টি কমিশনের প্রধানদের নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়। গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী (ফ্যাসিস্ট) শেখ হাসিনার ভারতে পলায়ন পরবর্তী ৮ আগস্ট নোবেল জয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইইনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের ছয়মাসের মাথায় ঐক্যমত্য কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি গঠনমূলক বাংলাদেশ বিনির্মাণের সূচনা সামনে আসলো। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সূচনা বক্তব্যে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসে প্রথম ইনিংস বা প্রথম অধ্যায় শেষ হয়েছে। আজকে রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হলো। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শরিফুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ছয়টি সংস্কার কমিশন যে রিপোর্টগুলো দিয়েছে, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সেগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করতেই কমিশনের এই বৈঠক।
রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া পৌছে স্বাক্ষর করবে। এই স্বাক্ষরে যে ডকুমেন্টটা হবে তা-ই জুলাই চাটার্ড। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশকে পুনর্গঠন এবং তারপর আমরা যে রাজনৈতিক সমাধানে যাচ্ছি, কীভাবে আমাদের ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনটা হবে, সেটার জন্যই আজকের রাজনৈতিক সংলাপের সূচনা। প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন যে, বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমরা হয়তো কিছু সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারবো। পরবর্তীতে যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসবে তারা বাকিগুলো বাস্তবায়ন করবে।