ছবি সংগ্রহ
আর মাত্র দু’দিন পরই ২১ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কোরবাণীর ঈদ। এবারের ঈদ উদযাপন হচ্ছে এমন এক সময়ে, যখন বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ১১ হাজার করোনা আক্রান্ত হচ্ছে। ডেল্টা ধরণের থাবায় নাজেহাল এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশটি। আর মৃত্যু গড় দু’শো!
এ অবস্থায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা কোরবাণীর পশুর হাট বিরোধী মঞ্চেই ছিলেন। প্রায় প্রতিদিন মিডিয়ার আলোচনা হয়েছে, ঈদ বড় না মানুষের জীবন? পশুর কিনতে গিয়ে যে সামাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে তা সামাল দেবে কে?
কঠোর লকডাউনেও যেখানে স্বাস্থ্যবিধি মান্যতায় উদাসীনতা, সেখানে কোরবাণীর পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মান্যতা দূর অস্ত। যাহোক তারপরও পশুর হাট বসেছে। তবে কোরবানীর হাট নিয়ে এবারে অনেক আগে থেকেউ বিভিন্ন মন্ত্রকের উদ্যোগ ছিলো প্রশংসনীয়।
হাটে জমায়েত না হয়ে অনলাইন মাধ্যম থেকে পশু কেনার পরামর্শর ক্যাম্পেইং নিয়ে মাঠে নামে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রক। ডাকা ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রক একাধিক ডিজিটাল পশুর হাটের উদ্বোধন করে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ দেশের জেলা-উপজেলার অনলাইন হাটগুলোকে সম্পৃক্ত করে একটি প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করে।
এমনি উদ্যোগের সুফলও মিলেছে। এবারে ডিজিটাল হাটে কোরবানির পশুর বেচাকেনা গতবারের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, গত ২ জুলাই থেকে রবিবার পর্যন্ত ১৭ দিনে অনলাইনে ২ হাজার ২০৬ কোটি ৬২ লাখ ৪৩ হাজার ৫৬৮ টাকার পশু বেচাকেনা হয়েছে। পশুর সংখ্যা ছিলো ৩ লাখ ১৮ হাজার ৫০৭টি। অনলাইনে কোরবাণীর কিনে কেউ ঠকবে এমন আশ্বস্ত করে আসছিলো সরকার। ক্রেতা ধরতে অনলাইনে বিজ্ঞাপন চালিয়েছে ই-কমার্স সাইটগুলো।
‘ডিজিটাল হাট ডট নেট’ নামে এ প্ল্যাটফর্মে এক হাজার ৮৪৩টি অনলাইন শপের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ের ২৪১টি হাটকে যুক্ত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত অনলাইনে ১৭ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬টি পশুর ছবি আপলোড করা হয়েছে। এরমধ্যে দুই হাজার ২০৬ কোটি ৬২ লাখ ৪৩ হাজার ৫৬৮ টাকা মূল্যে তিন লাখ ১৮ হাজার ৫০৭টি কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী
গরু-মহিষ বিক্রি হয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৯১০টি এবং ছাগল-ভেড়া বিক্রি হয়েছে ৭৩ হাজার ৫৯৭টি। পশু বিক্রির দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। এ বিভাগে এক লাখ ২৪ হাজার ৪৭টি গরু-মহিষ এবং ২৫ হাজার ২৩৮টি ছাগল-ভেড়া অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে রাজশাহী বিভাগ। রাজশাহীতে ২৮ হাজার ২৫৫টি গরু ও ১৮ হাজার ৫৩টি ছাগল-ভেড়া
বিক্রি হয়েছে। তৃতীয় স্থানে ঢাকা বিভাগ। এ বিভাগে মোট ৪২ হাজার ৫১৪টি গরু-মহিষ এবং তিন হাজার ৭০৫টি ছাগল-ভেড়া বিক্রি হয়েছে। চতুর্থ স্থানে রংপুর বিভাগ। এ বিভাগে অনলাইন
মাধ্যমে গরু-মহিষ বিক্রি হয়েছে ৩১ হাজার ৭৭৪টি ও ছাগল-ভেড়া ১৭ হাজার ১৪টি। অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রিতে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগ। রোববার পর্যন্ত মাত্র এক হাজার ৮৩৯টি গরু-মহিষ ও ১১৭টি ছাগল-ভেড়া বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া সিলেট বিভাগে তিন হাজার ৩০৬টি গরু-মহিষ এবং ৫৫৩টি ছাগল-ভেড়া, বরিশালে দুই হাজার ৪৩৪টি গরু-মহিষ ও ৪১৪টি ছাগল-ভেড়া এবং খুলনায় ১০ হাজার ৭৪১টি গরু-মহিষ এবং ৮ হাজার ৬০৩টি ছাগল-ভেড়া বিক্রি হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতবছর দেশে কোরবানি হয়েছিল ৯৪ লাখ ৫০ হাজার পশু। এরমধ্যে কোরবানির আগের দিন পর্যন্ত অনলাইনে মাত্র ৭০ হাজার গরু-ছাগল বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু এবার কোরবানির কয়েকদিন আগেই তার প্রায় পাঁচ গুণ বেশি বিক্রি হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কোরবানির পশুর মধ্যে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ পশু অনলাইনে বিক্রির নির্দেশনা রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। সেই লক্ষ্য পূরণেই জেলাভিত্তিক
অ্যাপ, ফেসবুক পেজ এবং সাইটে পশু বিক্রিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি, সরকারি উদ্যোগে পশু কেনাকাটা সহজ, প্রান্তিক কৃষকের সঙ্গে ক্রেতাদের সংযোগ স্থাপন এবং লেনদেনের ক্ষেত্রে আস্থা তৈরি করার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
আগামী কয়েকদিন বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (খামার) জিনাত সুলতানা। তিনি বলেন, গতবারের চেয়ে এবার
করোনা পরিস্থিতি খারাপ। তাই অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির সম্ভাবনাও বেশি। প্রতিবছর অনলাইন ও হাট মিলে গড়ে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকার মতো কোরবানির পশু বেচা-বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।