জাপিতর পিতার ১০১তম জন্মবার্ষিকী

- আপডেট সময় : ০৯:৩৫:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ মার্চ ২০২১ ২৬৯ বার পড়া হয়েছে

আমিনুল হক, ঢাকা
বাংলা অবিসংবাদিত নেতা তথা মুক্তির দূত বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১তম জন্মবার্ষিকী আজ। বাঙালি জাতি এই দিন পালন করে থাকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে। জাতির পিতার জন্মদিন পালন উপলক্ষ্যে বছরজুড়ে নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজনের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণের সঙ্গে বাংলার গণনায়কের জন্মবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারতের সঙ্গে কূটনীতির ৫০ বছরও একই সময়ে পালন করা হচ্ছে। যে আয়োজনে সামিল হচ্ছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ পাঁচ দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান। এই মহাআয়োজন ঘিরে ১০ দিনের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। আজ সরকারী ছুটি।
১৯২০ সালের আজ ১৭ই মার্চ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ার সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতার নাম সায়েরা খাতুন। পিতা-মাতার চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয়। খোকা নামের সেই শিশুটি পরে হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালির ত্রাতা ও মুক্তির দিশারি।
গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ এবং জনগণের প্রতি মমত্ববোধের কারণে পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। রাজনৈতিক সংগ্রামবহুল জীবনের অধিকারী বঙ্গবন্ধু বিশ্ব ইতিহাসে ঠাঁই করে নেন স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার হিসেবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদান চিরদিন অম্লান হয়ে থাকবে।
১৯৪৮ সাল থেকে ’৫২-র মহান ভাষা আন্দোলন, ’৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-র ঐতিহাসিক ৬ দফা, স্বায়ত্তশাসনের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে, কথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু কারারুদ্ধ হন। ’৭০-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার পক্ষে অকুণ্ঠ সমর্থন জানায় বাঙালি জাতি। এতে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের ম্যান্ডেট লাভ করে। ’৭১-এর মার্চে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ঐতিহাসিক ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেদিন গোটা বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ’৭১-এর ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইটের’ নামে নিরস্ত্র বাঙালির ঝাপিয়ে পড়ে। তারা নির্বিচারে গণগত্যা চালায়। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু তার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবন থেকে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কারাগারে আটক রেখে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তার প্রথম বিচার শুরু করে।
পাকবাহিনীর অত্যাচার ব্যাপকরূপ নিলে বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা মোতাবেক ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বীর বাঙালি ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে। জন্ম হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের। ’৭২-এর ১০ জানুয়ারি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের চাপে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে তিনি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরেই তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু সেই সুযোগ বেশি দিন পাননি তিনি।
১৯৭৫ সালে জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি তথা একটি শোষণমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে তিনি জাতীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর কিছুদিনের মধ্যেই ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকদের তপ্ত বুলেটে সপরিবারে নিহত হন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
ঢাকায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে কর্মসূচি
ঢাকায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে ১৭ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত ১০ দিনের নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দেশে শুরু হতে যাচ্ছে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ‘মুজিব চিরন্তন’ বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। অনুষ্ঠানমালায় বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম তুলে ধরা হবে। এতে যোগ দিতে ঢাকায় আসবেন বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানেরা। এছাড়া ৫০টি জাতীয় পতাকা সংবলিত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ঢাকা থেকে শুরু হবে র্যালি যা দেশের ৬৪টি জেলা প্রদক্ষিণ করে আগামী ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় ফিরে আসবে। যার মধ্য দিয়ে সুবর্ণজয়ন্তীর বছরব্যাপী কর্মসূচির পর্দা নামবে। এদিন মুজিববর্ষের কর্মসূচিও শেষ হবে। এর মাঝখানে বছরজুড়ে সারা দেশে অনুষ্ঠিত হবে নানা অনুষ্ঠান। তবে শেষ মুহূর্তে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় দুটি ব্যতিক্রমী আয়োজন লেজার ও ড্রোন শো বাতিল করা হয়েছে।
টুঙ্গি পাড়ায় জাতীয় শিশু দিবস
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস পালিত হচ্ছে টুঙ্গিপাড়ায়। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাণঘাতী করোনা প্রতিরোধ, প্রগতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীসহ জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াইয়ের দুর্জয় প্রেরণা, ইস্পাতকঠিন প্রত্যয় আর সব ষড়যন্ত্র ভেদ করে সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও রায় কার্যকরের দৃপ্ত শপথ নিয়ে বাঙালি আজ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালে বিবিসির একটি জরিপে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ হিসেবে সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত হন।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারা দেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, বেলা সাড়ে ১১টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের প্রতিনিধি দল টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন এবং দোয়া ও বিশেষ প্রার্থনায় অংশগ্রহণ নেবেন। বিকাল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি’ আয়োজিত কর্মসূচিতে আমন্ত্রিত নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করবেন।
করোনা প্রকোপের কারণে ঘরে বসে গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত কর্মসূচি দেখার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। আগামী ২১ মার্চ বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে সারা দেশে যথাযথ মর্যাদায় জাতির পিতার জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদ্্যাপনের জন্য সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।