ঢাকা ০৩:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

জলকাঁপানো স্লোগানে প্রকম্পিত তিস্তা পার, ১০ হাজার মানুষের পদযাত্রা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:৩৭:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ৫৫ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভারত সরকার একতরফাভাবে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে আন্তর্জাতিক নদী আইন লঙ্ঘন করেছে। তারা আমাদের সঙ্গে বৃহৎ রাষ্ট্রসূলভ আচরণ করছে। সাম্রাজ্যবাদী ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে। এ অবস্থা শুধু তিস্তার ক্ষেত্রেই নয় ভারত থেকে আসা ৫৪টি নদীর পানি প্রবাহ তারা একইভাবে নিয়ন্ত্রণ কিংবা অন্যায়ভাবে প্রত্যাহার করছে

১১০টি পয়েন্টে এ কর্মসূচি পালন করে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ

ভারতের পানি আগ্রাসনের শিকার বাংলাদেশ। বর্ষাকালে খরস্রোতা তিস্তাকে শুষ্ক মৌসুমে মরুভূমিতে পরিণত হয়। ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি না থাকায় উত্তরাঞ্চল মহাসংকটে। তিস্তার লালমনিরহাট অংশ এখন মৃতপ্রায়। একারণে লাখো মানুষের জীবন-জীবিকা ঝুঁকিতে। জীববৈচিত্র্য প্রায় বিলীন। জেলে আর মাঝিদের কর্মব্যস্ততা থেমে গেছে। থমকে গেছে লাখো পরিবারের উপার্জন। জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায মানবেতর জীবনযাপন করছে উত্তরজনপদের মানুষ। তিস্তা ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নীলফামারীর কালীগঞ্জ সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এটি লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধার মধ্য দিয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে। ৩১৫ কিলোমিটারের তিস্তার প্রায় ১২৫ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে। অথচ বছরের বেশিরভাগ সময় বাংলাদেশ অংশে পানি থাকে না।

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন বলছে, ভারত সরকার একতরফাভাবে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে আন্তর্জাতিক নদী আইন লঙ্ঘন করেছে। তারা আমাদের সঙ্গে বৃহৎ রাষ্ট্রসূলভ আচরণ করছে। সাম্রাজ্যবাদী ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে। এ অবস্থা শুধু তিস্তার ক্ষেত্রেই নয়, ভারত ৫৪টি নদীর পানি প্রবাহ একইভাবে অন্যায়ভাবে প্রত্যাহার করছে।

তিস্তা রক্ষায় আন্দোলনরত সংগঠন ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনে’র উদ্যোগে সোমবার লালমনিরহাটে জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই স্লোগানে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষের পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই পদযাত্রার নেতৃত্ব দেন তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব (দুলু)।

তিস্তা কর্তৃপক্ষ গঠন করে চলতি অর্থবছরেই পদ্মা সেতুর মতো নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ ছয় দফা দাবিতে নদীর দুই তীরে গণ-অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে দুই ঘণ্টাব্যাপী একযোগে তিস্তা অববাহিকার ১১০টি পয়েন্টে এ কর্মসূচি পালন করে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ।

সোমবার সুসজ্জিত পদযাত্রা লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন রোডের রেলওয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে রওনা হয়ে শহরের বিডিআর রোড, বিডিআর রেল গেট, মোগলহাট রেলগেট, পুরান বাজার, সাপটানা বাজার রোড, বাহাদুর মোড়, থানা রোড, স্বর্ণকার পট্টি, গোশালা বাজার রোড, রেলওয়ে স্টেশন রোড হয়ে শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশন মোড় গোল চক্করে শেষ হয়।

তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও তিস্তা মেগা প্রকল্প অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবিতে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের উদ্যোগে জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই স্লোগানকে সামনে রেখে একটি সামাজিক আন্দোলন চলমান রয়েছে। ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি দুই দিন তিস্তা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তিস্তা অববাহিকার রংপুর অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার মূল চালিকা শক্তি তিস্তা নদী। এক সময়ের প্রমত্ত তিস্তাকে উত্তরাঞ্চলের জীবন রেখা বলা হতো। কিন্তু তিস্তা নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণের কারণে তিস্তা নদী আজ শীর্ণ, স্থবির, একটি মৃতপ্রায় নদীতে পরিণত।

তিনি বলেন, বর্ষা ও খরা উভয় মৌসুমে তিস্তা এখন এ অঞ্চলের গণমানুষের মরণফাঁদ হয়ে ওঠেছে। বর্ষাকালে পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই ভারতের পানি ছেড়ে দেয়, তখন তিস্তার দুকূল প্লাবিত হয়ে মানুষের ঘরবাড়ি, আবাদি ফসল মুহূর্তে নিশ্চিহ্ন করে, জনজীবন বিপন্ন করে তোলে। আবার খরা মৌসুমে তিস্তার পানি প্রবাহ প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে আসে। ফলে তিস্তা নদীর দুইপাড়ের মাইলের পর মাইল এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হয়ে চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়ে।

দুলু বলেন, তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। এই তিস্তা অববাহিকার মানুষ দীর্ঘ দিন পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত। তিস্তা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে চলছে রাজনৈতিক স্থবিরতা। পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে তিস্তা নদী অববাহিকার মানুষের দুর্বিষহ বিপন্ন অবস্থা থেকে মুক্তির দাবিতেই ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি ৪৮ ঘণ্টা তিস্তা নদীর পাড়ে অবস্থান কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি

১৯৭৪ সালে তিস্তা প্রকল্প শুরু হয়। ১৯৮৩ সালে একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তিস্তার পানির ৩৯ শতাংশ ভারত এবং ৩৬ শতাংশ বাংলাদেশ পাবে। ডিসেম্বর থেকে মার্চের জন্য ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ পানি ধরে রেখে ভারত ২০১১ সালে বাংলাদেশকে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ পানি দিতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে চুক্তিটি হয়নি। তখন থেকে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি না থাকায় উত্তরাঞ্চল মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে

১৪টি স্থানে বাঁধ 

গত বছরের ১০ জুলাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার দেশের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, তিস্তায় কি পানি আছে যে বাংলাদেশকে দেওয়া যাবে? তাহলে তো উত্তরবঙ্গের মানুষ খাওয়ার পানিই পাবে না। বর্ষার তিস্তার সঙ্গে যেন গ্রীষ্মের তিস্তাকে এক করে দেখা না হয়। সিকিম থেকে নেমে আসা তিস্তা নদীর ১৪টি স্থানে সিকিম সরকার বাঁধ দিয়ে ১৪টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প চালু করেছে। এতে করে বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য সব পানিই টেনে নিচ্ছে সিকিম সরকার। এই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারকে বারবার জানালেও তারা কোনও উদ্যোগ নেয়নি। ফলে সেই সমস্যায় এখনো ভুগছে পশ্চিমবঙ্গের তিস্তাপারের মানুষ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

জলকাঁপানো স্লোগানে প্রকম্পিত তিস্তা পার, ১০ হাজার মানুষের পদযাত্রা

আপডেট সময় : ০৩:৩৭:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ভারত সরকার একতরফাভাবে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে আন্তর্জাতিক নদী আইন লঙ্ঘন করেছে। তারা আমাদের সঙ্গে বৃহৎ রাষ্ট্রসূলভ আচরণ করছে। সাম্রাজ্যবাদী ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে। এ অবস্থা শুধু তিস্তার ক্ষেত্রেই নয় ভারত থেকে আসা ৫৪টি নদীর পানি প্রবাহ তারা একইভাবে নিয়ন্ত্রণ কিংবা অন্যায়ভাবে প্রত্যাহার করছে

১১০টি পয়েন্টে এ কর্মসূচি পালন করে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ

ভারতের পানি আগ্রাসনের শিকার বাংলাদেশ। বর্ষাকালে খরস্রোতা তিস্তাকে শুষ্ক মৌসুমে মরুভূমিতে পরিণত হয়। ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি না থাকায় উত্তরাঞ্চল মহাসংকটে। তিস্তার লালমনিরহাট অংশ এখন মৃতপ্রায়। একারণে লাখো মানুষের জীবন-জীবিকা ঝুঁকিতে। জীববৈচিত্র্য প্রায় বিলীন। জেলে আর মাঝিদের কর্মব্যস্ততা থেমে গেছে। থমকে গেছে লাখো পরিবারের উপার্জন। জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায মানবেতর জীবনযাপন করছে উত্তরজনপদের মানুষ। তিস্তা ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নীলফামারীর কালীগঞ্জ সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এটি লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধার মধ্য দিয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে। ৩১৫ কিলোমিটারের তিস্তার প্রায় ১২৫ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে। অথচ বছরের বেশিরভাগ সময় বাংলাদেশ অংশে পানি থাকে না।

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন বলছে, ভারত সরকার একতরফাভাবে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে আন্তর্জাতিক নদী আইন লঙ্ঘন করেছে। তারা আমাদের সঙ্গে বৃহৎ রাষ্ট্রসূলভ আচরণ করছে। সাম্রাজ্যবাদী ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে। এ অবস্থা শুধু তিস্তার ক্ষেত্রেই নয়, ভারত ৫৪টি নদীর পানি প্রবাহ একইভাবে অন্যায়ভাবে প্রত্যাহার করছে।

তিস্তা রক্ষায় আন্দোলনরত সংগঠন ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনে’র উদ্যোগে সোমবার লালমনিরহাটে জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই স্লোগানে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষের পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই পদযাত্রার নেতৃত্ব দেন তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব (দুলু)।

তিস্তা কর্তৃপক্ষ গঠন করে চলতি অর্থবছরেই পদ্মা সেতুর মতো নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ ছয় দফা দাবিতে নদীর দুই তীরে গণ-অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে দুই ঘণ্টাব্যাপী একযোগে তিস্তা অববাহিকার ১১০টি পয়েন্টে এ কর্মসূচি পালন করে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ।

সোমবার সুসজ্জিত পদযাত্রা লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন রোডের রেলওয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে রওনা হয়ে শহরের বিডিআর রোড, বিডিআর রেল গেট, মোগলহাট রেলগেট, পুরান বাজার, সাপটানা বাজার রোড, বাহাদুর মোড়, থানা রোড, স্বর্ণকার পট্টি, গোশালা বাজার রোড, রেলওয়ে স্টেশন রোড হয়ে শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশন মোড় গোল চক্করে শেষ হয়।

তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও তিস্তা মেগা প্রকল্প অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবিতে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের উদ্যোগে জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই স্লোগানকে সামনে রেখে একটি সামাজিক আন্দোলন চলমান রয়েছে। ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি দুই দিন তিস্তা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তিস্তা অববাহিকার রংপুর অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার মূল চালিকা শক্তি তিস্তা নদী। এক সময়ের প্রমত্ত তিস্তাকে উত্তরাঞ্চলের জীবন রেখা বলা হতো। কিন্তু তিস্তা নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণের কারণে তিস্তা নদী আজ শীর্ণ, স্থবির, একটি মৃতপ্রায় নদীতে পরিণত।

তিনি বলেন, বর্ষা ও খরা উভয় মৌসুমে তিস্তা এখন এ অঞ্চলের গণমানুষের মরণফাঁদ হয়ে ওঠেছে। বর্ষাকালে পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই ভারতের পানি ছেড়ে দেয়, তখন তিস্তার দুকূল প্লাবিত হয়ে মানুষের ঘরবাড়ি, আবাদি ফসল মুহূর্তে নিশ্চিহ্ন করে, জনজীবন বিপন্ন করে তোলে। আবার খরা মৌসুমে তিস্তার পানি প্রবাহ প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে আসে। ফলে তিস্তা নদীর দুইপাড়ের মাইলের পর মাইল এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হয়ে চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়ে।

দুলু বলেন, তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। এই তিস্তা অববাহিকার মানুষ দীর্ঘ দিন পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত। তিস্তা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে চলছে রাজনৈতিক স্থবিরতা। পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে তিস্তা নদী অববাহিকার মানুষের দুর্বিষহ বিপন্ন অবস্থা থেকে মুক্তির দাবিতেই ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি ৪৮ ঘণ্টা তিস্তা নদীর পাড়ে অবস্থান কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি

১৯৭৪ সালে তিস্তা প্রকল্প শুরু হয়। ১৯৮৩ সালে একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তিস্তার পানির ৩৯ শতাংশ ভারত এবং ৩৬ শতাংশ বাংলাদেশ পাবে। ডিসেম্বর থেকে মার্চের জন্য ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ পানি ধরে রেখে ভারত ২০১১ সালে বাংলাদেশকে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ পানি দিতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে চুক্তিটি হয়নি। তখন থেকে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি না থাকায় উত্তরাঞ্চল মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে

১৪টি স্থানে বাঁধ 

গত বছরের ১০ জুলাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার দেশের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, তিস্তায় কি পানি আছে যে বাংলাদেশকে দেওয়া যাবে? তাহলে তো উত্তরবঙ্গের মানুষ খাওয়ার পানিই পাবে না। বর্ষার তিস্তার সঙ্গে যেন গ্রীষ্মের তিস্তাকে এক করে দেখা না হয়। সিকিম থেকে নেমে আসা তিস্তা নদীর ১৪টি স্থানে সিকিম সরকার বাঁধ দিয়ে ১৪টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প চালু করেছে। এতে করে বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য সব পানিই টেনে নিচ্ছে সিকিম সরকার। এই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারকে বারবার জানালেও তারা কোনও উদ্যোগ নেয়নি। ফলে সেই সমস্যায় এখনো ভুগছে পশ্চিমবঙ্গের তিস্তাপারের মানুষ।