ঢাকা ০৭:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সাহসী কণ্ঠ ছিলেন হেলাল হাফিজ: ড. ইউনূস ৭১’র স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির চক্রান্ত প্রতিহতের আহ্বান ইউনূসের বাংলাদেশের মসজিদ-মন্দির গির্জায় কোন পাহারা বসাতে হবে না ভারত থেকে ট্রেনে লপা ৪৬৮ টন আলু আমদানি দেশকে মেধাশূন্য করতে বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে ড. ইউনূস জাতীয় কবি ঘোষণার গেজেট প্রকাশের অনুমোদন পেলো ভারত বাংলাদেশের জনগণকে শত্রু বানাচ্ছে: বিজন কান্তি সরকার ধর্মীয় নেতাদের নিয়ে ড. ইউনূসের বৈঠক, তাৎক্ষণিক সমাধানে প্রকৃত তথ্য জানতে হবে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে সাম্প্রদায়িক বিভেদকে প্রতিহত করতে হবে: প্রধান বিচারপতির হাসিনা সরকার আমলে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার!

চিন্তপুর্নি মাতা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:৪৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৩ ৮৯ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

অলিভিয়া দাশগুপ্ত

চিন্তপুর্নি মাতা। ড্রাইভার সর্দারজী ঘাড় ফিরিয়ে জিজ্ঞাসা করলো মাডামজি, চিন্তপুরনি কে অর্থ আপ কো মালুম হ্যায় হ্সারাদিন? পথশ্রমে

ক্লান্ত থাকায় মাথা নাড়লাম।  সেই সকালে পালামপুর থেকে বেরিয়ে কাংড়া হয়ে উনায় এসেছি ! কয়েকশো কিমি গাড়িতে বসে পাহাড়ী

পথের চড়াই, উৎরাই প্রত্যক্ষ করে  এসে এখন মনে হচ্ছে বমন ক্রিয়াই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ক্রিয়া !

সেইমতো কৌস্তুভকে বললাম গাড়ি থামলে আগে হোটেলের খোঁজ করো ! কিন্তু ওর বক্তব্য আগে পুজো দিয়ে হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হবো !

ওদিকে সর্দারজি নিজের মনে বলে চলেছেন মা ভক্তের চিন্তা দূর করেন তাই তিনি চিন্তপুর্নি ! নিজের মনে হাসলাম !এখানে তো মা

ছিন্নমস্তা ! আর চিন্তার কথাই যদি ধরি সব ঠাকুরই তো তাহলে চিন্তা দূর করেন! এর বিশেষত্ব কোথায়! তবে একটা কথা ঠিক অমৃতসর

থেকে পাঠানকোটের পথে অনেক গাড়ীর কাঁচেই লেখা ছিল মা চিন্তপুর্নী !এখানে মায়ের মস্তক পড়েছিল !

ভাবতে ভাবতে দেখি আমাদের গাড়ি মন্দিরের পিছন দিক ফুলের দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালো ! ড্রাইভার বললো এটাই মায়ের মন্দির !

কিন্তু কিছু তো দেখতে পাচ্ছি না! সম্ভবত মন্দিরের পিছনের দিক ! এমন কপাল সামনেই দুটো বড়ো হোটেল! একটা হোটেল এ বন্দোবস্ত

করে আসার পর যখন হোটেলে ঢুকছি, শুনলাম মন্দিরের প্রধান পন্ডিতজির হোটেল!

প্রবেশ পথে রিসেপশনে দেখলাম বেশ গোলগাল চেহারার একজন ফর্সা লোক কানে ফোন নিয়ে বসে ! নমস্তে বলে হোটেলে ঢুকলাম !

হোটেলের রাজকীয় ঘর দেখে তো চক্ষু স্থির । এর আগের দিন বৈদ্যনাথ এ সাধারণ সব হোটেল ছিল । মুখ দিয়ে

বেরিয়ে গেল যাক মা মনের আশা পূর্ণ করেছেন । ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখলাম ধোঁয়া ওঠা চা অপেক্ষা করছে ! জিজ্ঞসা করে

জানলাম পন্ডিতজি আমাদের জন্য পাঠিয়েছেন ! কি মনে হওয়াতে ওনার কাছে গিয়ে সৌজন্যবশতঃ জিজ্ঞাসা করলাম

আপনি আজকে আমাদের পুজোটা দিয়ে দেবেন? উনি একগাল হেসে বললেন নেহি মেরা বেটা হ্যায় আজ। ..ও দেঙ্গে |

কলকাতা। .কালীঘাট, মমতা ব্যানার্জী সম্পর্কে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করলেন । দেখলাম পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে অনেক তথ্য

উনি জানেন। আর বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানের পন্ডিতজিদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি ওনারা দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক,

সামাজিক  ও  অর্থনৈতিক বিষয়ের সব কিছুই খোঁজ খবর রাখেন । ১০ মিনিট বাদে আমাদের ডাকতে হোটেলে একটি ছেলে

এলো।   আমরাও উঁচু নিচু কংক্রিটের ঢালাই পাহাড়ি পথে অগ্রসর হলাম ! যেতে যেতে মায়ের মাহাত্ম্য জানতে চাওয়াতে

ছেলেটি বললো মা এখানে ছিন্নমস্তা তাও ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে । মার্কণ্ড পুরাণ অনুযায়ী একদা মা চন্ডিকা দানবদের

বধ করে অত্যন্ত আহ্লাদিতা হয়ে এখানে ভ্রমণ করতে আসেন। সাথে ছিল তার দুই সহচরী জয়া ,বিজয়া। তাদের রক্তের

পিপাসা না মেটায় মাকে তারা উত্ত্যক্ত করতে থাকে আরো রক্তের জন্য । মা তখন ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে নিজ

মস্তক শরীর থেকে ছিন্ন করে হস্তে ধারণ করেন । সেই রক্ত জয়া ,বিজয়া পান করতে থাকে । এই আপাত

শরীর হিম করা গল্পের আসল অন্তর্ভেদী রহস্য হয়তো আখ্যানে রয়েছে, কিন্তু ভাবলে আশ্চর্য বোধ হয় এই

দেবী নিজেকে বিসর্জন দিতে পিছু পা হননি শুধুমাত্র ভক্তের মনোকামনা পূরণ করতে। কথা শেষ হতে না

হতেই এসে পড়লাম স্থানীয় একটি পূজা সামগ্রীর দোকানে । দোকানে জুতো রেখে পূজা সামগ্রী নিয়ে আবার

রওয়ানা হলাম। ভি.ভি.আই.পি.দের জন্য নির্দিষ্ট গেটে আমাদের নিয়ে যাওয়া হল । পুলিশি নিরাপত্তার ঘেরাটোপ

পেরিয়ে হাজির করানো হলো লিফটের দরজায় । কিছু বোঝার আগেই পৌঁছে গেলাম পাহাড়ের মাথায় অবস্থিত

হলঘরে । সেখান থেকে বেরিয়ে অপার বিস্ময়ে দেখলাম মায়ের গর্ভগৃহের সামনে দাঁড়িয়ে ।

ভি.ভি. আই পি খাতিরদারিতে আমাদের চারদিক ঘুরে দেখানো হলো । এরপর মাতৃদর্শন করলাম । মায়ের সারা গায়ে চিড়ে

মাখানো । অদ্ভুত লাগলো। কিন্তু কিছু ভাববার সুযোগ কম ঘরের কাছে নিঃস্বাস নিচ্ছে আমাদের বডিগার্ড। কে তাকে বোঝাবে

গোটা পশ্চিমবঙ্গে আমায় কেউ চেনে না আর এখানে তো কোনো প্রশ্নই নেই । তাড়াতাড়ি পুজো দিয়ে আমাদের নিয়ে সে বেরিয়ে

এলো। দোকানে এসে দেখলাম পন্ডিতজি বসে । সদাহাস্য পন্ডিতজি জিজ্ঞাসা করলেন মাকে দেখলেন? বললাম হ্যা। ..দ্বিতীয়বার

আবার জিজ্ঞাসা করলেন ক্যালেন্ডারে যেমন আছে তেমন দেখলাম কিনা? না তাকিয়েরই জবাব দিলাম হাঁ। .হটাৎ যেন ঘোর

কাটলো । উনি বারবার জিজ্ঞাসা করছেন কেন? বললাম মায়ের গায়ে চিড়ে চাপানো ছিল। জিজ্ঞাসা করলেন মায়ের এই রূপ

দেখতে চাও? বললাম হ্যা। .সাথে সাথে আবার খাতিরদারি করে দেখিয়ে নিয়ে আসা হলো আমাদের। এসে দেখলাম আরো দুজনের

সাথে পন্ডিতজি বসে আছেন । আমাদের সাথে আলাপ করে দিলেন । কথায় কথায় উনি বললেন রাজস্থানের একটি পরিবার থেকে

১৯ জন ৬ মাস ধরে দন্ডি খেটে এখানে এসেছিলেন তাদের মনোবাসনা পূরণহওয়ার জন্য । মা এখানে অচিন্তপুরনি । উনি ভক্তের

যে কোনো মনোবাসনা পূর্ণ করেন । রাত ৯.৩০ বেজে গেছে । সামনে হিমাচল প্রদেশের তাবড় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের গাড়ির

আনাগোনা চলছে মন্দিরের পথে, সাথে ওনার দোকানের সামনে সাময়িক বিরতি। হাতজোড় করে অনেকেই তাদের সমস্যা

বলে যাচ্ছেন ।

কেউ কেউ আক্ষেপ করছেন উনি পুজো না দেওয়ার জন্য । সামনেই হিমাচল প্রদেশের ভোট । কৌতূহল চাপতে না পেরে

জিজ্ঞাসা করলাম এখানে কোন পার্টি জিতবে? উনি বললেন মনে  হয় কংগ্রেস । পরবর্তীকালেকিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম

ওনার কথা ঠিক। কংগ্রেস জয়ী হয়েছে । যাই হোক ওনার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় বললেন কাল কিন্তু তোমরা আমার

সাথে হাভানে বসবে মানে যজ্ঞ করতে ।  উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছি উনি বললেন ব্রেকফাস্ট কিন্তু আমার সাথে করবে। মাথা

নেড়ে বেরিয়ে এলাম। মনে মনে ভাবছি উনি কি অন্তর্যামী ? খুব ইচ্ছে ছিল  যজ্ঞ করার কিন্তু বাগলামুখী মন্দিরে

জিজ্ঞাসা করতে বললো খুব কম ১৫০০০ টাকা। মনের ইচ্ছে মনে চেপে চলে এসেছি । কিন্তু উনি কত টাকা নেবেন?

ভেবেই অস্থির লাগছে। যেহেতু এখানে হোটেলে রাতের খাবার পাওয়া যাবে না তাই হাটতে হাটতে বাজারের পথে

চলে এলাম। আমাদের সাথে ছিল  আমাদের ড্রাইভার সর্দারজি । সে হটাৎ আবেগাপ্লুত হয়ে বলতে আরম্ভ করলো

মাডামজি আপনার জন্য এই প্রথম আমি মন্দির দর্শন করলাম। কি হলো জানি না হঠাৎ আমি মুখ থুবড়ে পরে গেলাম

পাহাড়ি ঢালু পথে । চারদিক থেকে লোকজন দৌঁড়ে এলো । শুনতে পাচ্ছি সবাই বলছে চাল নেহি পাওগে।..ছেলে বর ,

ড্রাইভার হায় হায় করছে। আমার শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি নেই উঠে দাঁড়ানোর।  কিন্তু কি হলো জানি না আমি হটাৎ উঠে

দাঁড়িয়ে নোংরা ঝেড়ে হাটতে লাগলাম সামনের দিকে যেন কিছুই হয় নি। পিছনে হতভম্ব জনতা । এসে পৌঁছলাম

শের এ পাঞ্জাব । একেই বোধ হয় বলে মার্ দয়া । তান্দুরি রুটি পনীর খেয়ে নিলাম । ততক্ষনে চারদিক শুনসান

হয়ে আসছে । কিন্তু ঈশ্বর যাদের পায়ে সর্ষে বিছিয়ে রেখেন তারা কি সহজে দমে ! এরপর কৌস্তুভের শুরু

হলো সিগারেট অভিযান। এ গলি সে গলি ঘুরে নিয়ে হোটেলে ঢুকলাম । পরদিন ভোরবেলায় বেরিয়ে পড়লাম

সবাই । সামনে চায়ের দোকানে স্থানীয় লোকেদের সাথে বসলাম চা খেতে। সাথে চলতে লাগলো আড্ডা ।

পন্ডিত মাই দাস পাতিয়ালা রিয়াসাত এর বাসিন্দা এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । তারা ছিলেন তিন ভাই

দেবী দাস , দূর্গা দাস ,মাই দাস। ছোট ভাই  মাই দাস কেবল সাধন ভজন নিয়ে ব্যাস্ত থাকতো।  তাই আর

দুই ভাই তাকে পছন্দ করতো না । কোনোই বা করবে? তিনি তো জগৎ সংসারের কোনো কাজেই লাগতেন

না ।  বাবার মৃত্যুর পর ভাইরা তাকে ত্যাগ করাতে তিনি শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করেন । পথে যেতে

যেতে ক্লান্ত হয়ে পাহাড়ের মাথায় ঘন বনে একটি বট গাছের তলায় ঘুমিয়ে পড়েন । স্বপ্নে দেখেন একটি

বাচ্ছা মেয়ে তাকে বলছে তুমি এখানে থেকে যাও আর আমার সেবা করো। কিন্তু তিনি এই স্বপ্নটা সত্যি

মনে না করে শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন । কিন্তু সেখানেও সে টিকতে না পেরে পুনরায় সেই বটের তলায়

এসে বসেন এবং মায়ের ধ্যানে নিমজ্জিত হন। সেই সময় মা দূর্গা  সিংহের পিঠে চেপে সেই স্থানে

আবির্ভুত হন এবং দেবী তাকে আদেশ করেন তিনি যেন সেখানে থেকে যান । এই বট গাছের নিচে দেবীর পিন্ডিস্বরূপ

যে শিলা আছে তা যেন নিয়মিত পূজা হয় । তিনি  পূর্বে পূজিতা হলেও কলি যুগে তার পুজা কেউ

করে না ।  কিন্তু এই গভীর অরণ্যে হিংস্র পশুদের আনাগোনা তার ওপর জলহীন জায়গা মাই দাস

ভাবতে লাগলেন তিনি কি করে থাকবেন? দেবী তার মনের কথা বুঝতে পেরে পাহাড়ের উত্তর ঢালে

পাথর সরাতে বলেন । তাই করতে সেখান দিয়ে পরিষ্কার ঝর্ণার জল বেরোতে লাগলো । এরপর সেখানে

একটি জলাধার নির্মাণ করে মাই দাস একটি কুটিরে  দিন কাটাতে লাগলেন । কালক্রমে সেই ছোট্ট

কুটিরটি আজ ভক্তদের দ্বারা বিশাল মন্দিরে পর্যবসিত হয়েছে । তার বংশধরেরা এখনো  পূজা করেন ।

ওদের সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম বলিউড থেকে শুরু করে তাবড় নেতারা সবাই পন্ডিতজি কে খুব

মানেন । উনি খুব  গন্যমান্য ব্যক্তি । কিন্তু ছোট্ট একটা প্রশ্ন মনে উঁকি দিচ্ছিল ওনার মতো লোক আমাদের

মতো সাধারণ লোকের জন্য এত করছেন কেন ? যাই হোক রেডি হয়ে পূর্ব নির্ধারিত স্থানে পৌঁছলাম ।

বিরাট পুজোর সামগ্রী তার সাথে মায়ের বিশাল ধ্বজা নিয়ে মায়ের জয়ধ্বনি দিতে দিতে সবাই মন্দির প্রাঙ্গনে

পৌঁছলাম । নির্দিষ্ট জায়গায় পুলিশী পাহারায় ভি.ভি.আই পি দের যজ্ঞ চলছে । আমরা লোহার দরজা ঠেলে

যজ্ঞের আগুনের  চারপাশে বসলাম । নির্দিষ্ট সময়ে যজ্ঞ হয়ে যাবার পর উনি আবার আমাদের পুজো দিয়ে

দিলেন । শুধু তাই নয় ভিডিও অব্দি করে পরে পাঠিয়ে দিলেন। কাল দেখতে পারিনি তাই আজ ঘুরে ঘুরে সব

দেখতে লাগলাম। বলা হয় যে এই মন্দির পাহারা দেয় রুদ্র শিব । এই মন্দির চারদিক দিয়ে চারটি মহাদেবের

মন্দির দ্বারা বেষ্টিত কৈলাশবর মহাদেব পূর্ব দিকে, নারায়ণ মহাদেব পশ্চিম দিকে মাচ্খন্ড মহাদেব উত্তরে

এবং দক্ষিনে শিব বাড়ি মন্দির । ধৌলাধার পর্বতের কোলে মার অবস্থান ! বলা হয় এখানে মার্ কপাল পড়েছিল

মন্দির প্রাঙ্গনে একটা আদ্ভুত শান্তি বিরাজ করছে । সাধারণত শক্তিপীঠে বলি দেওয়ার যে রীতি রয়েছে যেখানে

দেখলাম না । রাঁচির কাছে রাজরাপ্পায় ছিন্নমস্তা মায়ের মন্দির আছে । সেখানে নাকি সারাক্ষন বলি হয়ে চলেছে ।

মন্দিরের প্রধান পুরোহিত বললেন যে তারা বংশ পরম্পরায় এখানে মায়ের পুজো করেন । আগে বলি প্রথা থাকলেও

এখন তা নিষিদ্ধ । বর্তমানে বৈদিক পদ্ধতিতেই মার উপাসনা হয় । ফেরার তাড়ায় আমরা তাড়াতাড়ি  হোটেলে

ফিরলাম । গাড়িতে মালপত্র তোলবার সময় ডাক পড়লো পন্ডিতজির

কাছ থেকে । পৌঁছতেই উনি মনে করালেন ব্রেকফাস্ট করার কথা । সাথে সাথে গাওয়া ঘিয়ে ভাজা চানা,

বাতুরা,   মিষ্টি আর কফির অর্ডার দেওয়া হলো। আমি খেতে চাইছিলাম না কারণ আবার নয়না দেবীতে

পুজো দিতে  যাবো বলে । কিন্তু পন্ডিতজীর একান্ত অনুরোধে বাধ্য হয়ে খেলাম । যতই ওঠার চেষ্টা করি

ওনার গল্পের ফাঁদে বাঁধা পড়ে যাই । আসবার সময় মায়ের একাধিক ওড়না মিষ্টি বাড়ির পুজোর যাবতীয়

সামগ্রী সব পোঁটলা  বেঁধে দিলেন।  কিছুতেই আমার কাছ থেকে দক্ষিনা নিতে চাইলেন না । বললেন

আমরা ওনার পূর্ব জন্মের  পরিচিত।  জানি না পূর্বজন্ম  বা পরজন্ম আছে কিনা তবে মনে হলো উনি

আমার আজন্ম পরিচিত । নয়না দেবী যাবো শুনে ওখানকার পূজারীর সাথে ফোনে কথা  বলিয়ে দিলেন ।

আর বিদায় নেবার সময় প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করে বললেন, এর পরেরবার অমৃতসরে এসে ফোন করতে উনি গাড়ী

পাঠিয়ে দেবেন । গাড়িতে বিলাসপুর যেতে যেতে ভাবতে লাগলাম স্বপ্নের মতো কাটলো সময় এখানে । এত ভালো

হোটেলে থাকবার ব্যবস্থা, সুস্থ শরীর, যে হাভানা করতে পারিনি বলে দুঃখ ছিল তাও মা ঘোচালেন । সব থেকে বড় কথা

আমরা একটাদিন  কোনো মন্দিরে ভোগ পাইনি খেতে । সে দুঃখ ও পন্ডিতজি ঘুচিয়ে দিলেন । সর্বোপরি হাতে কোথাও

ধাগা বাঁধতে পারিনি বলে মনে খুঁত খুঁত ছিল সেটাও মিটিয়ে দিলেন । আসবার সময় উনি আমাদের হাতে মায়ের লাল

ধাগা  বেঁধে দিলেন । হঠাৎ সম্বিৎ ফিরলো সর্দারজির ডাকে।.. ক্যা মাডামজি দেখা চিন্তপুরনি মাতাজি কা কামাল?

সত্যি তো এই সহজ জিনিসটা কোনো বুঝতে পারলাম না? এই জগৎ সংসার সবটাই তো তার মায়া, তিনি না চাইলে

কি করে এত কিছু সম্ভব হতো ! পন্ডিতজি তো শুধু একটা মাধ্যম । মনে মনে মাকে সহস্র কোটি প্রণাম করে অজ্ঞতার

জন্য ক্ষমা চেয়ে নিলাম । জয় মাতা চিন্তপুর্নিজি ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

চিন্তপুর্নি মাতা

আপডেট সময় : ০৯:৪৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৩

অলিভিয়া দাশগুপ্ত

চিন্তপুর্নি মাতা। ড্রাইভার সর্দারজী ঘাড় ফিরিয়ে জিজ্ঞাসা করলো মাডামজি, চিন্তপুরনি কে অর্থ আপ কো মালুম হ্যায় হ্সারাদিন? পথশ্রমে

ক্লান্ত থাকায় মাথা নাড়লাম।  সেই সকালে পালামপুর থেকে বেরিয়ে কাংড়া হয়ে উনায় এসেছি ! কয়েকশো কিমি গাড়িতে বসে পাহাড়ী

পথের চড়াই, উৎরাই প্রত্যক্ষ করে  এসে এখন মনে হচ্ছে বমন ক্রিয়াই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ক্রিয়া !

সেইমতো কৌস্তুভকে বললাম গাড়ি থামলে আগে হোটেলের খোঁজ করো ! কিন্তু ওর বক্তব্য আগে পুজো দিয়ে হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হবো !

ওদিকে সর্দারজি নিজের মনে বলে চলেছেন মা ভক্তের চিন্তা দূর করেন তাই তিনি চিন্তপুর্নি ! নিজের মনে হাসলাম !এখানে তো মা

ছিন্নমস্তা ! আর চিন্তার কথাই যদি ধরি সব ঠাকুরই তো তাহলে চিন্তা দূর করেন! এর বিশেষত্ব কোথায়! তবে একটা কথা ঠিক অমৃতসর

থেকে পাঠানকোটের পথে অনেক গাড়ীর কাঁচেই লেখা ছিল মা চিন্তপুর্নী !এখানে মায়ের মস্তক পড়েছিল !

ভাবতে ভাবতে দেখি আমাদের গাড়ি মন্দিরের পিছন দিক ফুলের দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালো ! ড্রাইভার বললো এটাই মায়ের মন্দির !

কিন্তু কিছু তো দেখতে পাচ্ছি না! সম্ভবত মন্দিরের পিছনের দিক ! এমন কপাল সামনেই দুটো বড়ো হোটেল! একটা হোটেল এ বন্দোবস্ত

করে আসার পর যখন হোটেলে ঢুকছি, শুনলাম মন্দিরের প্রধান পন্ডিতজির হোটেল!

প্রবেশ পথে রিসেপশনে দেখলাম বেশ গোলগাল চেহারার একজন ফর্সা লোক কানে ফোন নিয়ে বসে ! নমস্তে বলে হোটেলে ঢুকলাম !

হোটেলের রাজকীয় ঘর দেখে তো চক্ষু স্থির । এর আগের দিন বৈদ্যনাথ এ সাধারণ সব হোটেল ছিল । মুখ দিয়ে

বেরিয়ে গেল যাক মা মনের আশা পূর্ণ করেছেন । ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখলাম ধোঁয়া ওঠা চা অপেক্ষা করছে ! জিজ্ঞসা করে

জানলাম পন্ডিতজি আমাদের জন্য পাঠিয়েছেন ! কি মনে হওয়াতে ওনার কাছে গিয়ে সৌজন্যবশতঃ জিজ্ঞাসা করলাম

আপনি আজকে আমাদের পুজোটা দিয়ে দেবেন? উনি একগাল হেসে বললেন নেহি মেরা বেটা হ্যায় আজ। ..ও দেঙ্গে |

কলকাতা। .কালীঘাট, মমতা ব্যানার্জী সম্পর্কে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করলেন । দেখলাম পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে অনেক তথ্য

উনি জানেন। আর বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানের পন্ডিতজিদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি ওনারা দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক,

সামাজিক  ও  অর্থনৈতিক বিষয়ের সব কিছুই খোঁজ খবর রাখেন । ১০ মিনিট বাদে আমাদের ডাকতে হোটেলে একটি ছেলে

এলো।   আমরাও উঁচু নিচু কংক্রিটের ঢালাই পাহাড়ি পথে অগ্রসর হলাম ! যেতে যেতে মায়ের মাহাত্ম্য জানতে চাওয়াতে

ছেলেটি বললো মা এখানে ছিন্নমস্তা তাও ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে । মার্কণ্ড পুরাণ অনুযায়ী একদা মা চন্ডিকা দানবদের

বধ করে অত্যন্ত আহ্লাদিতা হয়ে এখানে ভ্রমণ করতে আসেন। সাথে ছিল তার দুই সহচরী জয়া ,বিজয়া। তাদের রক্তের

পিপাসা না মেটায় মাকে তারা উত্ত্যক্ত করতে থাকে আরো রক্তের জন্য । মা তখন ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে নিজ

মস্তক শরীর থেকে ছিন্ন করে হস্তে ধারণ করেন । সেই রক্ত জয়া ,বিজয়া পান করতে থাকে । এই আপাত

শরীর হিম করা গল্পের আসল অন্তর্ভেদী রহস্য হয়তো আখ্যানে রয়েছে, কিন্তু ভাবলে আশ্চর্য বোধ হয় এই

দেবী নিজেকে বিসর্জন দিতে পিছু পা হননি শুধুমাত্র ভক্তের মনোকামনা পূরণ করতে। কথা শেষ হতে না

হতেই এসে পড়লাম স্থানীয় একটি পূজা সামগ্রীর দোকানে । দোকানে জুতো রেখে পূজা সামগ্রী নিয়ে আবার

রওয়ানা হলাম। ভি.ভি.আই.পি.দের জন্য নির্দিষ্ট গেটে আমাদের নিয়ে যাওয়া হল । পুলিশি নিরাপত্তার ঘেরাটোপ

পেরিয়ে হাজির করানো হলো লিফটের দরজায় । কিছু বোঝার আগেই পৌঁছে গেলাম পাহাড়ের মাথায় অবস্থিত

হলঘরে । সেখান থেকে বেরিয়ে অপার বিস্ময়ে দেখলাম মায়ের গর্ভগৃহের সামনে দাঁড়িয়ে ।

ভি.ভি. আই পি খাতিরদারিতে আমাদের চারদিক ঘুরে দেখানো হলো । এরপর মাতৃদর্শন করলাম । মায়ের সারা গায়ে চিড়ে

মাখানো । অদ্ভুত লাগলো। কিন্তু কিছু ভাববার সুযোগ কম ঘরের কাছে নিঃস্বাস নিচ্ছে আমাদের বডিগার্ড। কে তাকে বোঝাবে

গোটা পশ্চিমবঙ্গে আমায় কেউ চেনে না আর এখানে তো কোনো প্রশ্নই নেই । তাড়াতাড়ি পুজো দিয়ে আমাদের নিয়ে সে বেরিয়ে

এলো। দোকানে এসে দেখলাম পন্ডিতজি বসে । সদাহাস্য পন্ডিতজি জিজ্ঞাসা করলেন মাকে দেখলেন? বললাম হ্যা। ..দ্বিতীয়বার

আবার জিজ্ঞাসা করলেন ক্যালেন্ডারে যেমন আছে তেমন দেখলাম কিনা? না তাকিয়েরই জবাব দিলাম হাঁ। .হটাৎ যেন ঘোর

কাটলো । উনি বারবার জিজ্ঞাসা করছেন কেন? বললাম মায়ের গায়ে চিড়ে চাপানো ছিল। জিজ্ঞাসা করলেন মায়ের এই রূপ

দেখতে চাও? বললাম হ্যা। .সাথে সাথে আবার খাতিরদারি করে দেখিয়ে নিয়ে আসা হলো আমাদের। এসে দেখলাম আরো দুজনের

সাথে পন্ডিতজি বসে আছেন । আমাদের সাথে আলাপ করে দিলেন । কথায় কথায় উনি বললেন রাজস্থানের একটি পরিবার থেকে

১৯ জন ৬ মাস ধরে দন্ডি খেটে এখানে এসেছিলেন তাদের মনোবাসনা পূরণহওয়ার জন্য । মা এখানে অচিন্তপুরনি । উনি ভক্তের

যে কোনো মনোবাসনা পূর্ণ করেন । রাত ৯.৩০ বেজে গেছে । সামনে হিমাচল প্রদেশের তাবড় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের গাড়ির

আনাগোনা চলছে মন্দিরের পথে, সাথে ওনার দোকানের সামনে সাময়িক বিরতি। হাতজোড় করে অনেকেই তাদের সমস্যা

বলে যাচ্ছেন ।

কেউ কেউ আক্ষেপ করছেন উনি পুজো না দেওয়ার জন্য । সামনেই হিমাচল প্রদেশের ভোট । কৌতূহল চাপতে না পেরে

জিজ্ঞাসা করলাম এখানে কোন পার্টি জিতবে? উনি বললেন মনে  হয় কংগ্রেস । পরবর্তীকালেকিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম

ওনার কথা ঠিক। কংগ্রেস জয়ী হয়েছে । যাই হোক ওনার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় বললেন কাল কিন্তু তোমরা আমার

সাথে হাভানে বসবে মানে যজ্ঞ করতে ।  উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছি উনি বললেন ব্রেকফাস্ট কিন্তু আমার সাথে করবে। মাথা

নেড়ে বেরিয়ে এলাম। মনে মনে ভাবছি উনি কি অন্তর্যামী ? খুব ইচ্ছে ছিল  যজ্ঞ করার কিন্তু বাগলামুখী মন্দিরে

জিজ্ঞাসা করতে বললো খুব কম ১৫০০০ টাকা। মনের ইচ্ছে মনে চেপে চলে এসেছি । কিন্তু উনি কত টাকা নেবেন?

ভেবেই অস্থির লাগছে। যেহেতু এখানে হোটেলে রাতের খাবার পাওয়া যাবে না তাই হাটতে হাটতে বাজারের পথে

চলে এলাম। আমাদের সাথে ছিল  আমাদের ড্রাইভার সর্দারজি । সে হটাৎ আবেগাপ্লুত হয়ে বলতে আরম্ভ করলো

মাডামজি আপনার জন্য এই প্রথম আমি মন্দির দর্শন করলাম। কি হলো জানি না হঠাৎ আমি মুখ থুবড়ে পরে গেলাম

পাহাড়ি ঢালু পথে । চারদিক থেকে লোকজন দৌঁড়ে এলো । শুনতে পাচ্ছি সবাই বলছে চাল নেহি পাওগে।..ছেলে বর ,

ড্রাইভার হায় হায় করছে। আমার শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি নেই উঠে দাঁড়ানোর।  কিন্তু কি হলো জানি না আমি হটাৎ উঠে

দাঁড়িয়ে নোংরা ঝেড়ে হাটতে লাগলাম সামনের দিকে যেন কিছুই হয় নি। পিছনে হতভম্ব জনতা । এসে পৌঁছলাম

শের এ পাঞ্জাব । একেই বোধ হয় বলে মার্ দয়া । তান্দুরি রুটি পনীর খেয়ে নিলাম । ততক্ষনে চারদিক শুনসান

হয়ে আসছে । কিন্তু ঈশ্বর যাদের পায়ে সর্ষে বিছিয়ে রেখেন তারা কি সহজে দমে ! এরপর কৌস্তুভের শুরু

হলো সিগারেট অভিযান। এ গলি সে গলি ঘুরে নিয়ে হোটেলে ঢুকলাম । পরদিন ভোরবেলায় বেরিয়ে পড়লাম

সবাই । সামনে চায়ের দোকানে স্থানীয় লোকেদের সাথে বসলাম চা খেতে। সাথে চলতে লাগলো আড্ডা ।

পন্ডিত মাই দাস পাতিয়ালা রিয়াসাত এর বাসিন্দা এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । তারা ছিলেন তিন ভাই

দেবী দাস , দূর্গা দাস ,মাই দাস। ছোট ভাই  মাই দাস কেবল সাধন ভজন নিয়ে ব্যাস্ত থাকতো।  তাই আর

দুই ভাই তাকে পছন্দ করতো না । কোনোই বা করবে? তিনি তো জগৎ সংসারের কোনো কাজেই লাগতেন

না ।  বাবার মৃত্যুর পর ভাইরা তাকে ত্যাগ করাতে তিনি শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করেন । পথে যেতে

যেতে ক্লান্ত হয়ে পাহাড়ের মাথায় ঘন বনে একটি বট গাছের তলায় ঘুমিয়ে পড়েন । স্বপ্নে দেখেন একটি

বাচ্ছা মেয়ে তাকে বলছে তুমি এখানে থেকে যাও আর আমার সেবা করো। কিন্তু তিনি এই স্বপ্নটা সত্যি

মনে না করে শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন । কিন্তু সেখানেও সে টিকতে না পেরে পুনরায় সেই বটের তলায়

এসে বসেন এবং মায়ের ধ্যানে নিমজ্জিত হন। সেই সময় মা দূর্গা  সিংহের পিঠে চেপে সেই স্থানে

আবির্ভুত হন এবং দেবী তাকে আদেশ করেন তিনি যেন সেখানে থেকে যান । এই বট গাছের নিচে দেবীর পিন্ডিস্বরূপ

যে শিলা আছে তা যেন নিয়মিত পূজা হয় । তিনি  পূর্বে পূজিতা হলেও কলি যুগে তার পুজা কেউ

করে না ।  কিন্তু এই গভীর অরণ্যে হিংস্র পশুদের আনাগোনা তার ওপর জলহীন জায়গা মাই দাস

ভাবতে লাগলেন তিনি কি করে থাকবেন? দেবী তার মনের কথা বুঝতে পেরে পাহাড়ের উত্তর ঢালে

পাথর সরাতে বলেন । তাই করতে সেখান দিয়ে পরিষ্কার ঝর্ণার জল বেরোতে লাগলো । এরপর সেখানে

একটি জলাধার নির্মাণ করে মাই দাস একটি কুটিরে  দিন কাটাতে লাগলেন । কালক্রমে সেই ছোট্ট

কুটিরটি আজ ভক্তদের দ্বারা বিশাল মন্দিরে পর্যবসিত হয়েছে । তার বংশধরেরা এখনো  পূজা করেন ।

ওদের সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম বলিউড থেকে শুরু করে তাবড় নেতারা সবাই পন্ডিতজি কে খুব

মানেন । উনি খুব  গন্যমান্য ব্যক্তি । কিন্তু ছোট্ট একটা প্রশ্ন মনে উঁকি দিচ্ছিল ওনার মতো লোক আমাদের

মতো সাধারণ লোকের জন্য এত করছেন কেন ? যাই হোক রেডি হয়ে পূর্ব নির্ধারিত স্থানে পৌঁছলাম ।

বিরাট পুজোর সামগ্রী তার সাথে মায়ের বিশাল ধ্বজা নিয়ে মায়ের জয়ধ্বনি দিতে দিতে সবাই মন্দির প্রাঙ্গনে

পৌঁছলাম । নির্দিষ্ট জায়গায় পুলিশী পাহারায় ভি.ভি.আই পি দের যজ্ঞ চলছে । আমরা লোহার দরজা ঠেলে

যজ্ঞের আগুনের  চারপাশে বসলাম । নির্দিষ্ট সময়ে যজ্ঞ হয়ে যাবার পর উনি আবার আমাদের পুজো দিয়ে

দিলেন । শুধু তাই নয় ভিডিও অব্দি করে পরে পাঠিয়ে দিলেন। কাল দেখতে পারিনি তাই আজ ঘুরে ঘুরে সব

দেখতে লাগলাম। বলা হয় যে এই মন্দির পাহারা দেয় রুদ্র শিব । এই মন্দির চারদিক দিয়ে চারটি মহাদেবের

মন্দির দ্বারা বেষ্টিত কৈলাশবর মহাদেব পূর্ব দিকে, নারায়ণ মহাদেব পশ্চিম দিকে মাচ্খন্ড মহাদেব উত্তরে

এবং দক্ষিনে শিব বাড়ি মন্দির । ধৌলাধার পর্বতের কোলে মার অবস্থান ! বলা হয় এখানে মার্ কপাল পড়েছিল

মন্দির প্রাঙ্গনে একটা আদ্ভুত শান্তি বিরাজ করছে । সাধারণত শক্তিপীঠে বলি দেওয়ার যে রীতি রয়েছে যেখানে

দেখলাম না । রাঁচির কাছে রাজরাপ্পায় ছিন্নমস্তা মায়ের মন্দির আছে । সেখানে নাকি সারাক্ষন বলি হয়ে চলেছে ।

মন্দিরের প্রধান পুরোহিত বললেন যে তারা বংশ পরম্পরায় এখানে মায়ের পুজো করেন । আগে বলি প্রথা থাকলেও

এখন তা নিষিদ্ধ । বর্তমানে বৈদিক পদ্ধতিতেই মার উপাসনা হয় । ফেরার তাড়ায় আমরা তাড়াতাড়ি  হোটেলে

ফিরলাম । গাড়িতে মালপত্র তোলবার সময় ডাক পড়লো পন্ডিতজির

কাছ থেকে । পৌঁছতেই উনি মনে করালেন ব্রেকফাস্ট করার কথা । সাথে সাথে গাওয়া ঘিয়ে ভাজা চানা,

বাতুরা,   মিষ্টি আর কফির অর্ডার দেওয়া হলো। আমি খেতে চাইছিলাম না কারণ আবার নয়না দেবীতে

পুজো দিতে  যাবো বলে । কিন্তু পন্ডিতজীর একান্ত অনুরোধে বাধ্য হয়ে খেলাম । যতই ওঠার চেষ্টা করি

ওনার গল্পের ফাঁদে বাঁধা পড়ে যাই । আসবার সময় মায়ের একাধিক ওড়না মিষ্টি বাড়ির পুজোর যাবতীয়

সামগ্রী সব পোঁটলা  বেঁধে দিলেন।  কিছুতেই আমার কাছ থেকে দক্ষিনা নিতে চাইলেন না । বললেন

আমরা ওনার পূর্ব জন্মের  পরিচিত।  জানি না পূর্বজন্ম  বা পরজন্ম আছে কিনা তবে মনে হলো উনি

আমার আজন্ম পরিচিত । নয়না দেবী যাবো শুনে ওখানকার পূজারীর সাথে ফোনে কথা  বলিয়ে দিলেন ।

আর বিদায় নেবার সময় প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করে বললেন, এর পরেরবার অমৃতসরে এসে ফোন করতে উনি গাড়ী

পাঠিয়ে দেবেন । গাড়িতে বিলাসপুর যেতে যেতে ভাবতে লাগলাম স্বপ্নের মতো কাটলো সময় এখানে । এত ভালো

হোটেলে থাকবার ব্যবস্থা, সুস্থ শরীর, যে হাভানা করতে পারিনি বলে দুঃখ ছিল তাও মা ঘোচালেন । সব থেকে বড় কথা

আমরা একটাদিন  কোনো মন্দিরে ভোগ পাইনি খেতে । সে দুঃখ ও পন্ডিতজি ঘুচিয়ে দিলেন । সর্বোপরি হাতে কোথাও

ধাগা বাঁধতে পারিনি বলে মনে খুঁত খুঁত ছিল সেটাও মিটিয়ে দিলেন । আসবার সময় উনি আমাদের হাতে মায়ের লাল

ধাগা  বেঁধে দিলেন । হঠাৎ সম্বিৎ ফিরলো সর্দারজির ডাকে।.. ক্যা মাডামজি দেখা চিন্তপুরনি মাতাজি কা কামাল?

সত্যি তো এই সহজ জিনিসটা কোনো বুঝতে পারলাম না? এই জগৎ সংসার সবটাই তো তার মায়া, তিনি না চাইলে

কি করে এত কিছু সম্ভব হতো ! পন্ডিতজি তো শুধু একটা মাধ্যম । মনে মনে মাকে সহস্র কোটি প্রণাম করে অজ্ঞতার

জন্য ক্ষমা চেয়ে নিলাম । জয় মাতা চিন্তপুর্নিজি ।