ঢাকা ০৮:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চলচ্চিত্রের এক বাস্তববাদী যোদ্ধার নাম মৃণাল সেন

ঋদ্ধিমান
  • আপডেট সময় : ১১:৫২:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মে ২০২১ ৩০৭ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

তাঁর জন্মতারিখ মতে বেচে থাকলে দুই হাজার একুশ সালের ১৪ এপ্রিল ৯৭ বছরে পা রাখতেন। মৃণাল সেন জন্ম ১৯২৩ সালের ১৪ মে অভিক্ত ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ) ফরিদপুরে। কৈশোর কাটিয়ে চলে আসেন কোলকাতায়। স্কটিশ চার্চ কলেজ ও কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশুনো করেন। তিনি ছিলেন প্রগতিশীল ভাবনার মানুষ।

চলচ্চিত্র নির্মাণের আগে এ নিয়ে তাত্ত্বিক পড়াশুনা ও লেখালেখি শুরু করেছিলেন মৃণাল সেন। রুডলফ আর্নহেইমের ফিল্ম এসথেটিকস, নীলসনের সিনেমা অ্যাজ এ গ্রাফিক আর্ট এর মতো বই তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। যতদূর জানা যায়, তাঁর ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছিলো ষাটের দশকে ফরাসী সিনেমার নিউ ওয়েভ ধারা।

১৯৫৫ সালে ‘রাতভোর’ প্রথম ছবি নির্মাণ করে নিজেই ছবিটিকে অখ্যাত বলে মন্তব্য করেন।

আন্তর্জাতিক আত্মীয়তাবোধের প্রেরণা থেকেই ১৯৫৯ সালে তৈরি করেন, দ্বিতীয় সিনেমা ‘নীল আকাশের নীচে’। ছবিটিতে কাহিনী ‘এক চিনা ফেরিওয়ালাকে নিয়ে। যে নাকি রুজি রুটির তাগিদে এদেশের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। এখানেই শেষ নয়, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ইংরেজদের বিরুদ্ধে শরিকও হয়ে পড়ে।

‘বাইশে শ্রাবণ’ ছবিটি বানালেন ১৯৬০ সালে। তাতেও এক চিনা ফেরিওয়ালা এসেছিল যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে। আর এই সিনেমার বাঙালি ফেরিওয়ালা চরিত্রটি আসে দুর্ভিক্ষের স্রোতে যুক্ত হয়ে। মৃণাল সেনের অত্যন্ত সাড়াজাগানো এই ছবিটি মূলত একটি পরিবারের গল্প। ফেরিওয়ালা, তার স্ত্রী ও তাদের জীবন সংকটের গল্প। একটি পরিবারের গল্পের মধ্যে দিয়ে দুর্ভিক্ষকালীন সমাজের সংকট’কে ভাষা দেন মৃণাল সেন।

চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী মৃণাল সেনের জন্মদিনের আজকের এই লেখাটি তৈরির সম্পূর্ণ কৃতিত্বের দাবিদার সুস্মিতা মুখার্জি দাস দত্ত। একজন প্রতিথযশা বাচিক শিল্পী। চিন্তা-চেনতনায় প্রগতিশীল। তিনিই বিভিন্ন সময়ে খুদে বার্তা দিয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। এই বিষয়টিও তারই অবদান। আমরা সুস্মিতা দেবীর কাছে কৃতজ্ঞ। আজ এক খুদে বার্তায় জানালেন, ‘আজ অক্ষয় তৃতীয়, ঈদুল ফিতর, পরশুরাম জয়ন্তী, শ্রীকৃষ্ণের চন্দনযাত্রা-গঙ্গার মর্তে আগমন এবং ‘মৃণাল সেনে’র জন্মদিন।

বার্তাটি জানার পর আর বসে থাকা যায়না। হৃদয়ে রক্ষরণ নিয়েই শ্রদ্ধা জানাতে লিখেতে বসা প্রিয় চলচ্চিত্রকার বাংলা সিনেমার উজ্জ্বলতম নক্ষত্র মৃণাল সেনের ৯৮তম ‘জন্মদিন’র কথা।

জানা যায়, বিদেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তার তৈরি সিনেমার স্টিল ছবি এবং পাণ্ডুলিপি নিয়ে গিয়েছে গবেষণার জন্য।

 

দীর্ঘ পরিচালক জীবনে ভেনিস, বার্লিন, মস্কো, কারলোভি ভ্যালী, মন্ট্রিয়ল, শিকাগো প্রভৃতি জায়গা থেকে পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৮২ সালে ৩২তম বার্লিন আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এবং ১৯৮৩ সালে মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের জুরি বোর্ডের সদস্য ছিলেন মৃণাল সেন।

১৯৭২ সালে নির্মিত কলকাতায় ৭১ এবং ১৯৮০ তে নির্মিত খারিজ চলচ্চিত্রের তিনি দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে পুনশ্চ, ১৯৬৫ সালে আকাশ কুসুম এবং ১৯৯৩ সালে অন্তঃরীণ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কার পায়।

১৯৬৯ সালে ভুবন সোম, ১৯৭৯ সালে এক দিন প্রতিদিন, ১৯৮০ সালে আকালের সন্ধানে এবং ১৯৮৪ সালে খন্ডহর চলচ্চিত্রের জন্য তিনি সেরা পরিচালকের সম্মান লাভ করেন।

ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রধান নির্মাতা মৃণাল সেন ১৯৮৩ সালে পদ্মভূষণ পুরস্কারে সম্মানিত হন। ২০০০ সালে তিনি পেয়েছিলেন অর্ডার অফ ফ্রেন্ডশিপ পুরস্কার।

মৃণাল সেন শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকেসহ ভারতের জাতীয় প্রায় সব পুরস্কার পেয়েছেন, ভূষিত হয়েছেন পদ্মভূষণে। অন্যদিকে বার্লিন, কান, ভেনিস, মস্কো, শিকাগোসহ আন্তর্জাতিক প্রায় সব চলচ্চিত্র উৎসবের কোনো না কোনো পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।

সেলুলয়েডে গল্প বলে গেলেই তা চলচ্চিত্র হয় না, চলচ্চিত্রের রয়েছে একটি নিজস্ব ভাষা। ভারতবর্ষে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে গিয়ে প্রথম পর্যায়ে যারা তাদের ছবিতে চলচ্চিত্রের ভাষা প্রয়োগ করেন তাদের অন্যতম মৃণাল সেন।

ক্যামেরা চালু, সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয়, পোশাক, মেকআপ, সেট সবই থিয়েটারের মাপে। মোটামুটি সেই একই ধারা সাধারণভাবে আজও চলছে। ১৯১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর এই চলচ্চিত্র পরিচালক প্রয়াত হন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

চলচ্চিত্রের এক বাস্তববাদী যোদ্ধার নাম মৃণাল সেন

আপডেট সময় : ১১:৫২:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মে ২০২১

তাঁর জন্মতারিখ মতে বেচে থাকলে দুই হাজার একুশ সালের ১৪ এপ্রিল ৯৭ বছরে পা রাখতেন। মৃণাল সেন জন্ম ১৯২৩ সালের ১৪ মে অভিক্ত ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ) ফরিদপুরে। কৈশোর কাটিয়ে চলে আসেন কোলকাতায়। স্কটিশ চার্চ কলেজ ও কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশুনো করেন। তিনি ছিলেন প্রগতিশীল ভাবনার মানুষ।

চলচ্চিত্র নির্মাণের আগে এ নিয়ে তাত্ত্বিক পড়াশুনা ও লেখালেখি শুরু করেছিলেন মৃণাল সেন। রুডলফ আর্নহেইমের ফিল্ম এসথেটিকস, নীলসনের সিনেমা অ্যাজ এ গ্রাফিক আর্ট এর মতো বই তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। যতদূর জানা যায়, তাঁর ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছিলো ষাটের দশকে ফরাসী সিনেমার নিউ ওয়েভ ধারা।

১৯৫৫ সালে ‘রাতভোর’ প্রথম ছবি নির্মাণ করে নিজেই ছবিটিকে অখ্যাত বলে মন্তব্য করেন।

আন্তর্জাতিক আত্মীয়তাবোধের প্রেরণা থেকেই ১৯৫৯ সালে তৈরি করেন, দ্বিতীয় সিনেমা ‘নীল আকাশের নীচে’। ছবিটিতে কাহিনী ‘এক চিনা ফেরিওয়ালাকে নিয়ে। যে নাকি রুজি রুটির তাগিদে এদেশের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। এখানেই শেষ নয়, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ইংরেজদের বিরুদ্ধে শরিকও হয়ে পড়ে।

‘বাইশে শ্রাবণ’ ছবিটি বানালেন ১৯৬০ সালে। তাতেও এক চিনা ফেরিওয়ালা এসেছিল যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে। আর এই সিনেমার বাঙালি ফেরিওয়ালা চরিত্রটি আসে দুর্ভিক্ষের স্রোতে যুক্ত হয়ে। মৃণাল সেনের অত্যন্ত সাড়াজাগানো এই ছবিটি মূলত একটি পরিবারের গল্প। ফেরিওয়ালা, তার স্ত্রী ও তাদের জীবন সংকটের গল্প। একটি পরিবারের গল্পের মধ্যে দিয়ে দুর্ভিক্ষকালীন সমাজের সংকট’কে ভাষা দেন মৃণাল সেন।

চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী মৃণাল সেনের জন্মদিনের আজকের এই লেখাটি তৈরির সম্পূর্ণ কৃতিত্বের দাবিদার সুস্মিতা মুখার্জি দাস দত্ত। একজন প্রতিথযশা বাচিক শিল্পী। চিন্তা-চেনতনায় প্রগতিশীল। তিনিই বিভিন্ন সময়ে খুদে বার্তা দিয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। এই বিষয়টিও তারই অবদান। আমরা সুস্মিতা দেবীর কাছে কৃতজ্ঞ। আজ এক খুদে বার্তায় জানালেন, ‘আজ অক্ষয় তৃতীয়, ঈদুল ফিতর, পরশুরাম জয়ন্তী, শ্রীকৃষ্ণের চন্দনযাত্রা-গঙ্গার মর্তে আগমন এবং ‘মৃণাল সেনে’র জন্মদিন।

বার্তাটি জানার পর আর বসে থাকা যায়না। হৃদয়ে রক্ষরণ নিয়েই শ্রদ্ধা জানাতে লিখেতে বসা প্রিয় চলচ্চিত্রকার বাংলা সিনেমার উজ্জ্বলতম নক্ষত্র মৃণাল সেনের ৯৮তম ‘জন্মদিন’র কথা।

জানা যায়, বিদেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তার তৈরি সিনেমার স্টিল ছবি এবং পাণ্ডুলিপি নিয়ে গিয়েছে গবেষণার জন্য।

 

দীর্ঘ পরিচালক জীবনে ভেনিস, বার্লিন, মস্কো, কারলোভি ভ্যালী, মন্ট্রিয়ল, শিকাগো প্রভৃতি জায়গা থেকে পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৮২ সালে ৩২তম বার্লিন আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এবং ১৯৮৩ সালে মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের জুরি বোর্ডের সদস্য ছিলেন মৃণাল সেন।

১৯৭২ সালে নির্মিত কলকাতায় ৭১ এবং ১৯৮০ তে নির্মিত খারিজ চলচ্চিত্রের তিনি দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে পুনশ্চ, ১৯৬৫ সালে আকাশ কুসুম এবং ১৯৯৩ সালে অন্তঃরীণ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কার পায়।

১৯৬৯ সালে ভুবন সোম, ১৯৭৯ সালে এক দিন প্রতিদিন, ১৯৮০ সালে আকালের সন্ধানে এবং ১৯৮৪ সালে খন্ডহর চলচ্চিত্রের জন্য তিনি সেরা পরিচালকের সম্মান লাভ করেন।

ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রধান নির্মাতা মৃণাল সেন ১৯৮৩ সালে পদ্মভূষণ পুরস্কারে সম্মানিত হন। ২০০০ সালে তিনি পেয়েছিলেন অর্ডার অফ ফ্রেন্ডশিপ পুরস্কার।

মৃণাল সেন শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকেসহ ভারতের জাতীয় প্রায় সব পুরস্কার পেয়েছেন, ভূষিত হয়েছেন পদ্মভূষণে। অন্যদিকে বার্লিন, কান, ভেনিস, মস্কো, শিকাগোসহ আন্তর্জাতিক প্রায় সব চলচ্চিত্র উৎসবের কোনো না কোনো পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।

সেলুলয়েডে গল্প বলে গেলেই তা চলচ্চিত্র হয় না, চলচ্চিত্রের রয়েছে একটি নিজস্ব ভাষা। ভারতবর্ষে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে গিয়ে প্রথম পর্যায়ে যারা তাদের ছবিতে চলচ্চিত্রের ভাষা প্রয়োগ করেন তাদের অন্যতম মৃণাল সেন।

ক্যামেরা চালু, সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয়, পোশাক, মেকআপ, সেট সবই থিয়েটারের মাপে। মোটামুটি সেই একই ধারা সাধারণভাবে আজও চলছে। ১৯১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর এই চলচ্চিত্র পরিচালক প্রয়াত হন।