করোনা ছোঁবলে স্বপ্নের মৃত্যু

- আপডেট সময় : ০৮:৪৯:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুন ২০২১ ২২৪ বার পড়া হয়েছে
ছবি সংগ্রহ
“৫০০ কোটি টাকার লোকসানের মুখে শিবগঞ্জের আম চাষীরা”
করোনা প্রাদুর্ভাবের প্রায় দেড় বছর হতে চলেছে। এরই মধ্যে দুনিয়াজুড়ে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। অর্থনীতির পাশাপাশি মানুষের জীবনহানি ঘটেছে। সামাজিক জীবনেও এর প্রভাব পড়েছে ব্যাপক। মানুষিকভাবে ভেঙ্গে পড়ার পাশাপাশি নানা ধরণের হিংসা-বিদ্বেষ জন্ম নিয়েছে। মানুষ কারো ভালোমন্দ সইতে পারছেন না। এটা কারো দোষ নয়। প্রাকৃতিকভাবেই মানুষের ওপর প্রচন্ড চাপ এসে পড়েছে। চারিদিকে মৃত্যু, মানুষের হতাশা ইত্যাদি হাজারো কারণগুলো দানবের মতো মানুষের সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে।

ভালোবাসা, আদর-স্নেহ লোভ পাচ্ছে। মনের অজান্তে হিংসার জন্ম নিচ্ছে। কেবল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই যে বন্ধ তা নয়। বিনোদন থেকে শুরু করে সব কিছু বন্ধ রয়েছে। মানুষ এখন ঘরবন্দী।
এই অবস্থায় ব্যবসায়ীক অবস্থাটাও খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। বিশেষ গত একমাস ধরে দেশের উত্তরজনপদের রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনার একটা অংশ, বাগেরহাট ইত্যাদি সীমান্তবর্তী এলাকায় ডেল্টা ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে। মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছে। আমের রাজধানী রাজশাহী তার পাশ্ববর্তী জেলা চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার লাখ লাখ মন আম অবিক্রিত অবস্থায়।
করোনার প্রাদুর্ভাব রুখতে আমের মৌসুমে রেলওয়ের ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’ বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া রাজশাহীর সঙ্গে সড়ক ও ট্রেন চলাচল স্থগিত করা হয়েছে। ফলে আমচাষীদের সাক্ষাত লোবসানের মুখে পড়েছেন।
এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আমচাষীরা চলতি বছরে কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকার লোকসান মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একদিকে করোনা অন্যদিকে লকডাউন দু’য়ে মিলে লাখ লাখ মন আম অবিক্রিত অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হয়েছে। কঠোর বিধিনিষেধ, লকডাউন ও টানা বৃষ্টিপাতের কারণে আমের বাজারে মন্দা যাচ্ছে।
আমের ব্যবসায় লোকসানের হতাশা থেকে গত বুধবার উপজেলার নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নে লালচাঁদ নামে এক আম চাষী আত্মহত্যা করেছেন বলে জানান নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের ওয়ার্ড সদস্য হাসান আলী।
তিনি বলেন, ‘আমের ব্যবসায় লোকসানে পড়ে লালচাঁদ মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিল। এর আগেও তিনি কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। পরে বুধবার সকালে গলায় ফাঁস দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন।’
উপজেলার চককীর্ত্তি গ্রামের আম চাষী জাহাঙ্গির বিশ্বাস জানান, গত ৫ বছরে আমের ব্যবসায় তিনি ২০ লাখ টাকা লগ্নি করেছিলেন।এখন তিনি সর্বস্বান্ত।
উপজেলার একজন কৃষক জানান, তিনি গত বছর খিরসাপাত ও ল্যাংড়া আম ২ হাজার থেকে ২৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছিলেন। তবে এ বছর ক্রেতা না থাকায় স্থানীয় আড়তদারদের কাছে ১ হাজার টাকা মণ দরে আম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
চাতরার আম বাগান মালিক মোজতাবা আলম বাদল জানান, তিনি কোনো বাগানই এ বছর বিক্রি করতে পারেননি। আম পেড়ে বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে মণ প্রতি গড়ে ৭০০ টাকা দাম পাচ্ছেন। তিনি বলেন, বাগান পরিচর্যার খরচ সব লোকসান গিয়েছে। কিন্তু উপায় নেই। আম তো পেকে যাচ্ছে। দাম না থাকলেও তো বেচতে হবে।
অন্যদিকে স্থানীয় বাজারগুলোর আমের আড়তদারদের দাবি, কম দামে আম কিনেও তারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। শিবগঞ্জের আম আড়ৎদার আব্দুল সামাদ বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম শুনেই বাইরের মোকামগুলোতে দাম কমিয়ে দিচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অ্যান্ড কমার্সের সাবেক পরিচালক আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, এ বছর করোনার প্রভাবে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার লোকসান হবে জেলার আম ব্যবসায়ীদের।
জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ জানান, কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও আম সংশ্লিষ্ট সবকিছুই খোলা ছিল। আম পরিবহনে প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। পাশাপাশি ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন মাত্র দেড় টাকায় ঢাকায় আম পরিবহন করছে।
তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে বাইরের ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে অনলাইনে কৃষকদের অভ্যস্ত হতে হবে। যারা অনলাইনে আম বাজারজাত করছেন, তারা তুলনামূলক বেশি আম বিক্রি করতে পারছেন।’