করোনায় দরিদ্র মানুষ বেড়েছে আড়াই কোটি
- আপডেট সময় : ১০:১১:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ এপ্রিল ২০২১ ১৬১ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক
পরিসংখ্যা অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৬০ লাখ। এই হিসাবে করোনার প্রভাবে বিগত একবছরে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন। দ্বিতীয় ঢেউয়ে এ হার আরও বাড়ার আশঙ্কা। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) যৌথ উদ্যোগে এক জরিপের ভিত্তিতে এমন তথ্য ওঠে এসেছে।
২০২০ সালের এপ্রিল থেকে গত মার্চ পর্যন্ত সারাদেশের নির্দিষ্ট কিছু লোকের ওপর তিন ধাপে এ জরিপ সম্পন্ন করা হয়। যেখানে বলা হয়েছে, করোনার এক বছরে দেশের ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ মানুষের জীবনমান নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে।
মঙ্গলবার জুম প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রকাশ করেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান ও বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন। ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, দরিদ্র নয় কিন্তু ঝুঁকিতে থাকা একশ্রেণির মানুষ রয়েছে, যারা দারিদ্র্যসীমার কিছুটা ওপরে থাকে।
পিপিআরসি যাদের ওপর জরিপ করেছে, তাদের মধ্যে গত মার্চে এই শ্রেণির লোকদের ৫০ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে জীবনযাপন করছে। যা গত বছরের জুনে ছিল ৭২ শতাংশ। এ জরিপের ভিত্তিতে জাতীয়ভাবে নতুন দারিদ্র্যের প্রাক্কলন করা হলে গত বছর এপ্রিলে এ হার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং জুনে ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ ছিল।
কিন্তু গত বছরের শেষের দিকে পরিস্থিতির উন্নতি হলে অনেকে নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করতে পেরেছেন। যে কারণে গত মার্চে এসে তা কমে ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ ধরনের নতুন দরিদ্র শহরে বেশি। এ শ্রেণির মানুষের কভিড-পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রতি পাঁচ বছর পর পর জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্য পরিস্থিতির ওপর জরিপ করে। জাতীয় পর্যায়ের জরিপের ফলাফল অনুযায়ী প্রতিবছর দারিদ্র্যের প্রাক্কলন করে থাকে সংস্থাটি। ২০১৬ সালে সর্বশেষ জাতীয় পর্যায়ে খানা আয় ব্যয় জরিপ করেছে বিবিএস। জরিপে ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষের জীবনমান দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল।
জরিপের ভিত্তিতে ২০১৯ সালের প্রাক্কলনে দেখা গেছে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে। ফলে করোনার আগেই দেশে প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ দরিদ্র ছিল। পিপিআরসি ও বিআইজিডির জরিপের ভিত্তিতে প্রাক্কলন বিবেচনায় নিলে এখন দরিদ্র লোকের সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি।
হোসেন জিল্লুর বলেন, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে গত জুন মাস থেকে উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে করোনার আগে কাজ করতেন, এখন কাজ নেই এমন সংখ্যা ৮ শতাংশ। অনেকেই চেষ্টা করে কাজে ফিরতে পারছেন না।
কেউ কেউ আগের তুলনায় কম দক্ষতার কাজে ফিরছেন। অনেকে পেশা বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে নারী কর্মীদের কাজে ফেরার চ্যালেঞ্জ বেশি। করোনার আগে কাজে ছিলেন এমন এক-তৃতীয়াংশ নারী কাজে ফিরতে পারছেন না।
জরিপে দেখা গেছে, শহরের বস্তিবাসীরা করোনাভাইরাসের আগে যে আয় করতেন, এখনও সে অবস্থায় ফিরতে পারেননি। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ কম আয় হচ্ছে তাদের।
করোনার আঘাত সব জায়গায় একইভাবে অনুভূত হয়নি। শহরের তুলনায় গ্রামে তার প্রভাব কমই দেখা গিয়েছে। সে কারণে শহরের বস্তিবাসীর জীবন গ্রামের শ্রমজীবীদের তুলনায় অনেক বেশি অরক্ষিত।
উপস্থাপিত প্রতিবেদনে করোনার অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় স্মার্ট লকডাউন অর্থাৎ শ্রমজীবী মানুষের আয়ের পথ খোলা রেখে করোনার বিস্তার রোধের ব্যবস্থা করার পরামর্শ এসেছে। একই সঙ্গে করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সামাজিক সহায়তা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে বলা হয়েছে, চলমান সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পাশাপাশি বিশেষায়িত কর্মসূচি নিতে হবে।
টোকেন কর্মসূচি নয়। নতুন আড়াই কোটি দরিদ্রকে অন্তর্ভুক্ত করে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি সাজাতে হবে। কুটির, ক্ষুদ্র ও এসএমই খাতে প্রণোদনা বাস্তবায়নের পন্থায় পরিবর্তন আনতে হবে।