এবারে চলে গেলেন প্রথিতযশা রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মিতা হক
- আপডেট সময় : ০৪:৪৫:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ এপ্রিল ২০২১ ২৩৩ বার পড়া হয়েছে
মিতা হক
সমৃদ্ধ হক, ঢাকা
এবারে চলে গেলেন প্রতিথযশা রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মিতা হক। বুড়িগঙ্গার দক্ষিণ তীরে কেরাণীগঞ্জ এলাকা। যেখানে মা-বাবা এবং চাচা দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রপথিক, বরেণ্য রবীন্দ্র গবেষক এবং ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা ওয়াহিদুল হক স্থায়ী বসতি গড়েছেন। মিতাও সেখানেই চলে গেলেন। মূলত চাচার কাছেই সঙ্গীতে হাতে খড়ি। সকাল বেলা বিছানা ছাড়ার পরই টিভি পর্দার স্ক্রলে সংবাদ দেখতে পেলাম। তার বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর।
মিতা হক
সংবাদটা দেখার পর থেকেই দিন ভর মনটা খুব খারাপ। কোন কাজ করার ইচ্ছে করছিলো না। অবশেষে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি মাথায় টোকা দিতেই বসে পড়তে হলে কম্পিউটারে।
পাকিস্তানি শাষকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ছায়ানটের শিল্পীদের নিয়ে ৬০ দশকে ঢাকার রমনা বটমূলে ‘এসো হে বৈশাখ এসো’ অনুষ্ঠান শুরু করেছিলেন বরেণ্য রবীন্দ্র গবেষক, গায়ক, সংগঠক এবং সাংবাদিক ওয়াহিদুল হক। ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।
বাংলাদেশে রবীন্দ্র ”র্চ্চা এবং শুদ্ধ রবীন্দ্র সঙ্গীতের প্রসারে আমৃত্য নিবেদিক ছিলেন ওয়াহিদুল হক। সেই চাচার কাছেই সঙ্গীতে হাতে খড়ি মিতা হকের। চলেও গেলেন চাচার স্থায়ী বসতিতেই।
রবিবার সকাল ৬টা কুড়ি মিনিটে প্রয়াত হন মিতা। কয়েকদিন আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। সর্বশেষ দিন চারেক আগে পরীক্ষায় করোনার নেগেটিভ আসে। কিডনী রোগে আক্রান্ত মিতা হকের নিয়মিত ডায়ালিসিস করতে হতো। তবে, তিনি নিয়মিত ছায়ানটে আসতেন। রবিবার ভোর রাতে তার অবস্থার অবণতি হলে ঢাকার একটি হাসপাতালে হয়। সেখানে চিচিৎসাধীন অবস্থায় প্রয়াত হন মিতা।
স্বামী খালেদ খানের সঙ্গে মিতা হক
কথা অনুযায়ী বেলা ১১টা নাগাদ তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় ছায়ানটে। এখানে অনেকেই ছুটে আসেন। তারা ফুল আর অশ্রুতে শেষ বিদায় জানান মিতা হককে। সুরতীর্থ নামের একটি সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান ছিল তার। সেটার পরিচালক ও প্রশিক্ষক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। তবে, ছায়ানট ছিল তার হৃদস্পন্দন।
এই সংগঠনটির ছায়ায়ই নিজের বিকাশ ও বেড়ে ওঠা। এক পর্যায়ে ছায়ানটের রবীন্দ্রসংগীত বিভাগের প্রধান ছিলেন তিনি। দায়িত্ব পালন করেছেন রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সহসভাপতি হিসেবে।
প্রিয় শিল্পী মিতা হকের সঙ্গে রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী রাবেয়া আকতার
শিল্পীর জন্ম ১৯৬৩ সালে। তিনি প্রথমে তার চাচা ওয়াহিদুল হক এবং পরে ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খান ও সনজীদা খাতুনের কাছে গান শেখেন। ১৯৭৪ সালে তিনি বার্লিন আন্তর্জাতিক যুব ফেস্টিভালে অংশ নেন। ১৯৭৭ সাল থেকে নিয়মিত তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে সংগীত পরিবেশন করেছেন।
আর স্বামী অভিনেতা নির্দেশক খালেদ খান বেশ ক’বছর আগে প্রয়াত হন। একমাত্র মেয়ে জয়িতাও রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী। স্বামী অভিনেতা মুস্তাফিজ শাহিন।
১৯৯০ সালে বিউটি কর্নার থেকে প্রকাশিত হয় মিতা হকের প্রথম রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম ‘আমার মন মানে না’। সঙ্গীতায়োজনে ছিলেন সুজেয় শ্যাম। সব মিলিয়ে প্রায় ২০০টি রবীন্দ্রসংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন। তার একক অ্যালবামের সংখ্যা ২৪টি।
যার ১৪টি ভারত থেকে ও ১০টি বাংলাদেশ প্রকাশ পায়। শিল্পী মিতা হক ২০১৬ সালে শিল্পকলা পদক লাভ করেন। সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য ২০২০ সালে একুশে পদক পান।
কবি রবীরাদ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মিতা হককে বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র পুরস্কার দেয়া হয়। একই বছর চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত ‘রবি-চ্যানেল আই রবীন্দ্রমেলায় রবীন্দ্র সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে মিতা হককে সম্মাননা দেয়া হয়।