ঢাকা ০৪:১৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এবারেও ঘরবন্দীই থাকলো ‘পহেলা বৈশাখ’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৪৩:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ এপ্রিল ২০২১ ২২৪ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠানের অতীত চিত্র : ছবি সংগ্রহ

 

‘মুছে যাক সব গ্লানি , ঘুচে যাক জরা ,
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা ।
রসের আবেশরাশি শুষ্ক করি দাও আসি ,
আনো , আনো , আনো তব প্রলয়ে শাঁখ
মায়ার কুজ্ঝটি-জাল যাক দূরে যাক ।
অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক…
এসো , এসো , এসো , হে বৈশাখ …’

 

ঋদ্ধিমান, ঢাকা

আজ পহেলা বৈশাখ। ঢাক-ঢোলের শব্দে ইটপাথরের রাজপথ কেঁপে ওঠেনি! বাঙালির হৃদয়ে অনুভূত হয়নি, পহেলা বৈশাখের সার্বজনিন উৎসবের। ঢাকার রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখের প্রথম আলোকে স্বাগত জানিয়ে শতকণ্ঠে উচ্চারিত হয়নি, ‘এসো হে বৈশাখ এসো… এসো’।

আবহমান বাঙলার এই আহ্বান আজ উদাও! থেমে গিয়েছে বাঙালির কল্যাণ বার্তা নিয়ে আসা মঙ্গলশোভা যাত্রা! থেমে গিয়েছে, কাকডাকা ভোরে বিছানা ছেড়ে নতুন শাড়ি আর মাটির গহনায় নিজেকে সাজিয়ে পহেলা বৈশাখকে বরণের ব্যস্ততা। ছোট্ট খুকু মণির পড়া হয়নি পহেলা বৈশাখের শাড়ি। তার বায়নায় দাদু লুকিয়ে চোখের জল মুছেন! বলতে পারেন, আমরা কিই বা করতে পারি?

রমনা বটমূল : হাজারো প্রাণের উচ্ছ্বাস  কেড়ে নিয়েছে করোনা : সংগ্রহিত

এমন প্রশ্নের উত্তর মারণভাইরাস কেড়ে নিয়েছে। কি বলবো বলুন? উত্তরের পরিবর্তে প্রশ্ন প্রতিধ্বনি হতে থাকে। একে তাড়ানোর উপায় বলুন? ঘরে বসে থাকুন। ফের প্রতিধ্বনি। ঘরে বসে এই নিদানকালে পরিবারকে রক্ষা করুন। এটাই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।

এমন একটা ঘোলাটে পরিস্থিতির মধ্যেই এবারেও এলো পহেলা বৈশাখ। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ন্যায় বাংলাদেশেও আজ এক সপ্তাহের সার্বিক লকডাউন শুরু হয়েছে। বিনা কারণে ঘরের বাইরে বেরুনো নিষিদ্ধ। সেখানে পহেলা বৈশাখ? এতো কল্পনার সীমানার বাইরে।

মঙ্গল শোভাযাত্রা

ফি বারও এমনটি হয়েছিলো। সবাইকে ঘরবন্দী করে রেখেছিলো করোনা তথা কভিড। বিভিন্ন আয়োজনে এ থেকে মুক্তির প্রার্থনা করেও সুফল মেলেনি। বরং প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আক্রান্তর দিক দিয়ে রেকর্ড গড়ে চলেছে। ফলে প্রতি বছর পহেলা বৈশাখকে স্বাগত জানাতে যে রাজপথে মানুষের স্রোত বয়ে যেতো, আজ তা বিরানভূমি।

বাংলানববর্ষ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বলেছেন, ‘মানুষের জীবন সবার আগে, বেচে থাকলে আমরা সব গুছিয়ে নিতে পারবো। তাই কষ্ট হলেও ঘরেই থাকুন।’

ষাটের দশকে রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান : সংগৃহিত

রমনার বটমূল শুকনো পাতায় ছেয়ে গেছে। এই স্থানটিতেই হতো ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। এই আয়োজনের ইতিহাস দীর্ঘ। মূলত এটিই দেশে পহেলা বৈশাখকে আবাহনের প্রধান অনুষ্ঠানে পরিণত হয়ে ওঠেছিল। এবারে ঘরের বাইরে কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই নতুন বর্ষকে বরণের আয়োজন সীমাবদ্ধ থাকছে সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশনের পর্দায়।

তাতেই নববর্ষের বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে। আর এসব অনুষ্ঠানগুলোয় থাকছে পূর্বের ধারণ করা। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি আর লকডাউনের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পহেলা বৈশাখ বরণের মঙ্গল শোভাযাত্রা হচ্ছে না।

গুগলে বর্ষবরণের লোগো : সংগৃহিত

এমন পরিস্থিতিকে সঙ্গী করেই বাঙালির জীবনে এলো পহেলা বৈশাখ। নতুন আলোয় ভেসে এলো বঙ্গাব্দ ১৪২৮। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোহম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

এবারেও ঘরবন্দীই থাকলো ‘পহেলা বৈশাখ’

আপডেট সময় : ১১:৪৩:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ এপ্রিল ২০২১

রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠানের অতীত চিত্র : ছবি সংগ্রহ

 

‘মুছে যাক সব গ্লানি , ঘুচে যাক জরা ,
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা ।
রসের আবেশরাশি শুষ্ক করি দাও আসি ,
আনো , আনো , আনো তব প্রলয়ে শাঁখ
মায়ার কুজ্ঝটি-জাল যাক দূরে যাক ।
অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক…
এসো , এসো , এসো , হে বৈশাখ …’

 

ঋদ্ধিমান, ঢাকা

আজ পহেলা বৈশাখ। ঢাক-ঢোলের শব্দে ইটপাথরের রাজপথ কেঁপে ওঠেনি! বাঙালির হৃদয়ে অনুভূত হয়নি, পহেলা বৈশাখের সার্বজনিন উৎসবের। ঢাকার রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখের প্রথম আলোকে স্বাগত জানিয়ে শতকণ্ঠে উচ্চারিত হয়নি, ‘এসো হে বৈশাখ এসো… এসো’।

আবহমান বাঙলার এই আহ্বান আজ উদাও! থেমে গিয়েছে বাঙালির কল্যাণ বার্তা নিয়ে আসা মঙ্গলশোভা যাত্রা! থেমে গিয়েছে, কাকডাকা ভোরে বিছানা ছেড়ে নতুন শাড়ি আর মাটির গহনায় নিজেকে সাজিয়ে পহেলা বৈশাখকে বরণের ব্যস্ততা। ছোট্ট খুকু মণির পড়া হয়নি পহেলা বৈশাখের শাড়ি। তার বায়নায় দাদু লুকিয়ে চোখের জল মুছেন! বলতে পারেন, আমরা কিই বা করতে পারি?

রমনা বটমূল : হাজারো প্রাণের উচ্ছ্বাস  কেড়ে নিয়েছে করোনা : সংগ্রহিত

এমন প্রশ্নের উত্তর মারণভাইরাস কেড়ে নিয়েছে। কি বলবো বলুন? উত্তরের পরিবর্তে প্রশ্ন প্রতিধ্বনি হতে থাকে। একে তাড়ানোর উপায় বলুন? ঘরে বসে থাকুন। ফের প্রতিধ্বনি। ঘরে বসে এই নিদানকালে পরিবারকে রক্ষা করুন। এটাই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।

এমন একটা ঘোলাটে পরিস্থিতির মধ্যেই এবারেও এলো পহেলা বৈশাখ। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ন্যায় বাংলাদেশেও আজ এক সপ্তাহের সার্বিক লকডাউন শুরু হয়েছে। বিনা কারণে ঘরের বাইরে বেরুনো নিষিদ্ধ। সেখানে পহেলা বৈশাখ? এতো কল্পনার সীমানার বাইরে।

মঙ্গল শোভাযাত্রা

ফি বারও এমনটি হয়েছিলো। সবাইকে ঘরবন্দী করে রেখেছিলো করোনা তথা কভিড। বিভিন্ন আয়োজনে এ থেকে মুক্তির প্রার্থনা করেও সুফল মেলেনি। বরং প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আক্রান্তর দিক দিয়ে রেকর্ড গড়ে চলেছে। ফলে প্রতি বছর পহেলা বৈশাখকে স্বাগত জানাতে যে রাজপথে মানুষের স্রোত বয়ে যেতো, আজ তা বিরানভূমি।

বাংলানববর্ষ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বলেছেন, ‘মানুষের জীবন সবার আগে, বেচে থাকলে আমরা সব গুছিয়ে নিতে পারবো। তাই কষ্ট হলেও ঘরেই থাকুন।’

ষাটের দশকে রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান : সংগৃহিত

রমনার বটমূল শুকনো পাতায় ছেয়ে গেছে। এই স্থানটিতেই হতো ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। এই আয়োজনের ইতিহাস দীর্ঘ। মূলত এটিই দেশে পহেলা বৈশাখকে আবাহনের প্রধান অনুষ্ঠানে পরিণত হয়ে ওঠেছিল। এবারে ঘরের বাইরে কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই নতুন বর্ষকে বরণের আয়োজন সীমাবদ্ধ থাকছে সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশনের পর্দায়।

তাতেই নববর্ষের বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে। আর এসব অনুষ্ঠানগুলোয় থাকছে পূর্বের ধারণ করা। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি আর লকডাউনের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পহেলা বৈশাখ বরণের মঙ্গল শোভাযাত্রা হচ্ছে না।

গুগলে বর্ষবরণের লোগো : সংগৃহিত

এমন পরিস্থিতিকে সঙ্গী করেই বাঙালির জীবনে এলো পহেলা বৈশাখ। নতুন আলোয় ভেসে এলো বঙ্গাব্দ ১৪২৮। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোহম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের।