উইঘুর ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা চমৎকার, তবে যথেষ্ট নয়

- আপডেট সময় : ১০:২৫:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ মার্চ ২০২১ ২১৫ বার পড়া হয়েছে

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক
জিনজিয়াংয়ে চীনের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের লাগাম টেনে ধরতে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে সোচ্চার হতে হবে চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ জিনজিয়াংয়ে মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায় উইঘুর এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর উপর চালানো গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাকে সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ বলে বরাবরই দাবি করে আসছে বেইজিং।
তবে দেশটির অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণহত্যা বন্ধে এবার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পথে হেঁটেছে বাইডেন প্রশাসন। এর উদাহরণ গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক জিনজিয়াংয়ে উৎপাদিত তুলার উপর নিষেধাজ্ঞা। যার কয়েকদিন পরেই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়-এ নিষেধজ্ঞার ফলে প্রদেশটির অসংখ্য কোম্পানি ও স্থানীয় বাসিন্দারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এই পদক্ষেপের জন্য জিনজিয়াংয়ে জার্মান বংশদ্ভূত চীনা নীতির একজন বিশেষজ্ঞ ড. অ্যাড্রিয়ান জেনজকে দায়ী করেছে বেইজিং। যিনি উইঘুর মুসলিম ও সংখ্যালঘুদের ওপর চীনের চালানো গণহত্যা ও জোরপূর্বক শ্রমিকে রূপান্তরিত করার মতো অপরাধগুলোকে বিশ্ব পরিসরে প্রকাশ করেছেন।
ড. অ্যাড্রিয়ান জেনজ বলেন, প্রদেশটিতে তুলা আহরণের জন্য উইঘুর মুসলিমদের ব্যবহার করা হতো। এ কাজের জন্য তাদের কোনো বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিবর্তে হাতের ব্যবহারে বাধ্য করা হয়েছিল। তাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি এ পণ্যটির উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবি করেছিলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান বলছে, গত ২০২০ অর্থবছরে দেশটি চীন থেকে প্রায় ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের তুলা ক্রয় করেছে। আমদানি করা সেই তুলার ৮৭ শতাংশই উৎপন্ন হয় শিনজিয়াংয়ে। ফলে এমন একটি পদক্ষেপ যে জিনজিয়াংকে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এক্ষেত্রে একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ দারুণ হলেও সেটি যথাযথ নয়। কারণ বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোকেও এ ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে। নতুবা এ বিষয়ে চীনকে রুখে দেওয়া যাবে না।
এর আগে প্রদেশটিতে উইঘুর মুসলমানদের বিরুদ্ধে চীনের কর্মকাণ্ডে জাতিসংঘের ‘গণহত্যা কনভেনশন’র প্রতিটি ধারার লঙ্ঘন হয়েছে বলে দাবি করে একটি স্বাধীন প্যানেল। মানবাধিকার, যুদ্ধাপরাধ ও আন্তর্জাতিক আইনের অর্ধশতাধিকেরও বেশি বিশেষজ্ঞের করা এক প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়। সম্প্রতি প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক থিংক ট্যাংক ‘নিউলাইন ইনস্টিটিউট ফল স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসি’।
এতে দাবি করা হয়, উইঘুর মুসলমানদের বিরুদ্ধে চলমান গণহত্যার রাষ্ট্রীয় দায় চীন সরকারকে বহন করতে হবে। এতে জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশনের প্রতিটি ধারার লঙ্ঘন ঘটেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অঞ্চলটিতে বিশাল বন্দীশিবিরে ২০ লাখের বেশি উইঘুর ও অন্যান্য মুসলমানদের আটক করে রাখা হয়েছে। তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণ, যৌন নির্যাতন ও বলপূর্বক সন্তান জন্মদান রোধ করে দেওয়া হয়েছে।
গত জানুয়ারিতে এসব অভিযোগের সত্যতা পায় ট্রাম্প প্রশাসন। পরে বাইডেন প্রশাসনের সেক্রেটারি অ্যান্থনি ব্লিংকেনও একই কথা জানিয়েছেন। যার জেরে জিনজিয়াংয়ের তুলা ও টমেটোর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে ড. অ্যাড্রিয়ান জেনজ ‘উইঘুর ফোর্সড লেবার প্রিভেনশন অ্যাক্ট’ পাশের জন্য কংগ্রেসের কাছে অনুরোধ করেছেন। বেইজিং যেহেতু উইঘুরদের জোরপূর্বক শ্রমে নিযুক্ত করেছে; তার মতে, এই আইন পাস হলে সেগুলো বন্ধ হবে। অন্যথায় তাদের সবধরনের পণ্য রপ্তানির দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। যে ভয় তাদের নিবৃত্ত করতে পারে।
এছাড়া আগামী ২০২২ সালে চীনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া অলিম্পিক আসরে যোগ দেওয়া হবে কী-না তা বাইডেন প্রশাসন ও বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর ভেবে দেখা উচিত। কারণ যে দেশের হাতে এত রক্ত, তাদের আয়োজেনে ক্রীড়ার মতো সম্প্রীতিপূর্ণ একটা আয়োজনে অংশ নেওয়া মানেই বিবেকহীনতার পরিচয় দেওয়া, নয় কী?
সূত্র ওয়াশিংটন পোস্ট