আল জারিরার বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে ঠেকেছে : তথ্যমন্ত্রী
- আপডেট সময় : ০৩:৩৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১ ২১৭ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস ডিজিটাল রিপোর্ট
বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আল জাজিরার সাম্প্রতিক রিপোর্ট তাদেরকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বাংলাদেশে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রচন্ডভাবে লোপ পেয়ে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে, বিশ্বব্যাপী তাদের বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আল জাজিরার জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে যে, ‘অল দা প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ রিপোর্টটি দেয়ার পর তারা বাংলাদেশে প্রচন্ডভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছ্ েতাদের গ্রহণযোগ্যতা, বিশ্বাসযোগ্যতা প্রচন্ডভাবে লোপ পেয়ে তলানিতে ঠেকেছে।
আল জাজিরায় যে রিপোর্টটি করা হয়েছে, সেটির শিরোনামের সঙ্গে রিপোর্টের কোনো সম্পর্ক নেই জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, রিপোর্টের শিরোনাম দিয়েছে ‘অল দা প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ আর ভেতরের প্রতিবেদনটি হচ্ছে সেনাপ্রধান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। প্রতিবেদনটা দেখেশুনে মনে হয়েছে এটি ব্যক্তিগত আক্রোশবশত, এনিমোসিটি’বশত।
আল জাজিরার মতো একটা টেলিভিশনে এই ব্যক্তিগত আক্রোশবশত রিপোর্টের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে আল জাজিরার গ্রহণযোগ্যতা বহুগুণে কমেছে এবং বিশ্বব্যাপী আল জাজিরার নিরপেক্ষতা, বস্তুনিষ্ঠতা এবং তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত রিপোর্টিং -এগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অবশ্য আল জাজিরা নিয়ে এই প্রশ্ন আজকে যে প্রথমবার উঠেছে তা নয়। এর আগেও বহুবার বহুদেশে তাদের নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেক দেশে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ রয়েছে। এমনকি ভারতেও বন্ধ করা হয়েছিল। এখনও অনেক দেশে বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান তথ্যমন্ত্রী।
দেশে আল জাজিরা সম্প্রচার বন্ধের ব্যবস্থা কেন নেয়া হয়নি, জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ব্যবস্থা নিতে পারতাম। অন্যদেশে যেভাবে বন্ধ করা হয় আমাদের দেশে চাইলেই সেভাবে বন্ধ করতে পারতাম, কিন্তু আমরা তা করিনি। কারণ আমরা গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। কিন্তু অবাধ স্বাধীনতার পাশাপাশি সমস্ত গণমাধ্যমেরও নিজস্ব দায়িত্ব থাকে।
আল জাজিরা এক্ষেত্রে তাদের দায়িত্বশীলতা পালনে ব্যর্থ হয়েছে। তারা একটি পক্ষ হয়ে কাজ করেছে এবং আমরা যতটুকু শুনেছি সম্ভবত এটির সঙ্গে আরও বহুপক্ষ যুক্ত রয়েছে। সেনাপ্রধানকে টার্গেট করে সরকারের সমালোচনা করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে অথচ রিপোর্টের সঙ্গে সরকারের বা প্রধানমন্ত্রীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
আর সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি, কিন্তু কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি যদি আদালতে যায় সেক্ষেত্রে আদালত থেকে যদি কোনো নির্দেশনা পাই তাহলে আদালতের নির্দেশনা অবশ্যই পালন করা হবে বলে জানান ড. হাছান।
প্রতিবেদন সহযোগীদের মধ্যে ডেভিড বার্গম্যান সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালে বার্গম্যানের বিরুদ্ধে বিচার চলছিল। পরে তিনি হাইকোর্টে নি:শর্ত ক্ষমা চেয়েছেন এবং দেশত্যাগ করে চলে গেছেন। আল জাজিরার রিপোর্টে একসময় বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধীদের ‘ইসলামী ক্লার্জি’ বা ‘ইসলামী বুদ্ধিজীবী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। ডেভিড বার্গম্যান তাদের পক্ষ নিয়েছিল। আর সেখানে যে মূল বক্তা মিস্টার সামি, তার আরও অনেকগুলো নাম আছে।
তার ফিরিস্তি আগে আমি জানতাম না, রির্পোর্ট হওয়ার পরে সব ফিরিস্তি বেরিয়েছে-কখন তার পিতা তাকে ত্যাজ্যপুত্র করেছেন, কখন তিনি চুরিতে ধরা পড়েছেন। এ ধরণের লোককে নিয়ে যখন রিপোর্ট তৈরি করা হয়, তখন গণমাধ্যমেরই ক্ষতি হয়।
বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর ‘আল জাজিরার রিপোর্টের পর দিল্লীর সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ বেড়েছে’ এ মন্তব্যের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রিজভী সাহেব মাঝে মধ্যে কিছু উদ্ভট কথাবার্তা বলেন, এটিও তার চিরাচারিত বিভিন্ন উদ্ভট কথার একটি। আমাদের সাথে ভারতের সুসম্পর্ক বহুদিনের। এবং ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশি। ভারতের সঙ্গে আমাদের সবসময় সুসম্পর্ক এবং বর্তমান ভারত সরকারের সাথে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সেই সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। আল জাজিরার একটি রিপোর্টে যেভাবে তারা নাচানাচি করছে এতে কোনো লাভ হচ্ছে না। এটি নিয়ে আমরা মোটেও উদ্বিগ্ন নই।
তথ্যমন্ত্রী এসময় তার সদ্যসমাপ্ত ভারত সফরের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কলকাতায় তৃতীয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব উদ্বোধন, সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র ‘আ ডটার্স টেল’ দেখে মানুষের অশ্রু বিসর্জন, কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রায় ১৫ লাখ বাঙালির সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ স্মরণে একইস্থানে সমাবেশে যোগদান ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ভারতীয়দের সম্মাননা প্রদান, কিংবদন্তী সঙ্গীত শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ, মুম্বাইয়ের ফিল্মসিটিতে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকের স্যুটিং পরিদর্শন কার্যক্রম সংক্ষেপে তুলে ধরেন।
প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের চিরন্তন গান ‘বঙ্গবন্ধু, ফিরে এলে তোমার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায় তুমি/ আজ ঘরে ঘরে এতো খুশি তাই/ কি ভালো তোমাকে বাসি আমরা/ বলো কি করে বুঝাই’ বাজিয়ে শোনালে সভাকক্ষে। যাতে তন্ময় আবেশ তৈরি হয়।