ঢাকা ০৪:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আদালত চত্বরেই ফের বিয়ে

ভয়েস ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৯:১৯:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫ ৭১ বার পড়া হয়েছে

বিয়ে প্রতীকী ছবি

ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সাত বছর বয়সী কন্যা শিশুটি স্কুলে যাবার পথে দেখতে পেতো সহপাঠিদের মায়েরা স্কুলে আনা নেওয়া করছে। এটা সেটা কিনে দিতো। মা হারা মেয়েটি এসব দেখে সব সময় মন মরা হয়ে থাকতো। প্রতিটি মুর্হূতে কচি মনে মায়ের অনুপস্থিতি অনুভব করতো। দূরে থাকা মাকে দেখতে এসে সহপাঠিদের মায়ের কথা বলে বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তো। অস্থির হয়ে কাঁদতে কাঁদতে মা-বাবাকে এক ছাদের তলায় দেখতে চাইতো।

স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ হয়ে যায় মেয়েটির বয়স যখন প্রায় সাড়ে তিন বছর। মেয়ের হেফাজত চেয়ে এরই মধ্যে স্ত্রী এবং স্বামী আদালতে মামলাও করেন। কিন্তু তাদেও মধ্যে দেওয়া হয়ে দাঁড়ায় মেয়েটি। সে সব সময় বাবা-মাকে একসঙ্গে দেখতে চাইতো।

অবশেষে দুই কন্যা সন্তানের মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে ব্যথা ও অভিমান ভুলে দম্পতি ফের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আর সেই বিয়ে পড়ানো হয় আদালত প্রাঙ্গণে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মলয় কুমার সাহা সংবাদমাধ্যমকে জানান, সন্তানদের মানসিক অবস্থা বিবেচনায় দম্পতি এক হয়েছেন। ধর্মীয় বিধান মেনে আদালত চত্বরে তাদের ফের বিয়ে সম্পন্ন হয় এবং তারা সংসার শুরু করেছেন।

২০১৭ সালে পারিবারিকভাবে এই দুজনের বিয়ে হয়। তারা দুজনই উচ্চশিক্ষিত। দুজনই উচ্চপদে চাকরি করেন। বিয়ের পর নারীর বাবার বাড়িতে তাদের সংসার শুরু হয়। পরে ঢাকার একটি ভাড়া বাসা নিয়ে থাকা শুরু করেন। বিয়ের এক বছরের মাথায় তাদের কন্যাসন্তানের জন্ম।

নারীর ভাষ্য, বিয়ের পর তাদের সংসার ভালোই চলছিল। স্বামী যৌতুক চেয়েছিলেন। এ কারণে মেয়ের সুখের কথা ভেবে যৌতুক হিসেবে ৬ লাখ টাকা ব্যয় করে টিভি, ফ্রিজ, খাট ও আলমারি উপহার দেন তার বাবা।

মামলায় নারী অভিযোগ করেন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তার স্বামীর ভাড়া বাসায় ওঠার কয়েক মাস পর থেকে সংসারে অশান্তি শুরু হয়। ভাড়া বাসার পাশে তার ননদের বাসা ছিল। শাশুড়ি কখনো তাদের সঙ্গে, আবার কখনো মেয়ের বাসায় থাকতেন। তুচ্ছ কারণে শাশুড়ির সঙ্গে তার প্রায় সময় মনোমালিন্য হতো। এ নিয়ে স্বামী তাকে কটু কথা বলতেন। একপর্যায়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতেন স্বামী। তবু সন্তানের কথা ভেবে অত্যাচার সহ্য করে সংসার করতে থাকেন তিনি।

তালাক কার্যকরের (তিন মাস) আগে স্বামীর পরিবারের সদস্যরা তালাকের নোটিশ প্রত্যাহারের অনুরোধ করতে থাকেন। স্বামী ও তাদের স্বজনেরা নারীর কাছে অঙ্গীকার করেন, আর কখনোই শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা হবে না। স্বামীর অনুরোধ ও সন্তানের কথা ভেবে কার্যকর হওয়ার আগে নারী তালাকের নোটিশ প্রত্যাহার করে নেন। ফলে ফের শুরু তাদের নতুন জীবন।

আদালতের কাছে নারী দাবি করেন, আবার সংসার শুরুর পর থেকে কয়েক মাস তার স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক বেশ ভালো ছিল। তবে দ্বিতীয় সন্তান গর্ভে আসার পর থেকে আবারও স্বামী নির্যাতন করা শুরু করেন। তিনি এতটাই উগ্র হয়ে ওঠেন যে নির্যাতন ঠেকাতে পরিবারের অন্য সদস্যরা এগিয়ে এলে স্বামী তাঁদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করতেন।

নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আবারও স্বামীর বাসা ছেড়ে চলে যান বাবার বাসায়। ২০২১ সালের ৩০ আগস্ট তিনি আবার তাঁর স্বামীকে তালাকের নোটিশ দেন। তালাক কার্যকরও হয়। ছয় মাস পর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার দ্বিতীয় কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। স্বামী কখনো দ্বিতীয় সন্তানকে দেখতে আসেননি।

তবে এই নারীর সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তাঁর সাবেক স্বামী। সাবেক স্বামীর অভিযোগ, তাঁর মায়ের সঙ্গে স্ত্রীর বনিবনা হতো না। এ কারণে স্ত্রী প্রায় সময় তাঁর মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। একদিন রাগ করে তাঁর স্ত্রী বড় মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান। দ্বিতীয় সন্তান জন্মের পর কন্যাদের দেখতে তিনি শ্বশুরবাড়িতে গেলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে মারধর করেন। এ সময় তিনি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন দেন। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

আদালত চত্বরেই ফের বিয়ে

আপডেট সময় : ০৯:১৯:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫

সাত বছর বয়সী কন্যা শিশুটি স্কুলে যাবার পথে দেখতে পেতো সহপাঠিদের মায়েরা স্কুলে আনা নেওয়া করছে। এটা সেটা কিনে দিতো। মা হারা মেয়েটি এসব দেখে সব সময় মন মরা হয়ে থাকতো। প্রতিটি মুর্হূতে কচি মনে মায়ের অনুপস্থিতি অনুভব করতো। দূরে থাকা মাকে দেখতে এসে সহপাঠিদের মায়ের কথা বলে বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তো। অস্থির হয়ে কাঁদতে কাঁদতে মা-বাবাকে এক ছাদের তলায় দেখতে চাইতো।

স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ হয়ে যায় মেয়েটির বয়স যখন প্রায় সাড়ে তিন বছর। মেয়ের হেফাজত চেয়ে এরই মধ্যে স্ত্রী এবং স্বামী আদালতে মামলাও করেন। কিন্তু তাদেও মধ্যে দেওয়া হয়ে দাঁড়ায় মেয়েটি। সে সব সময় বাবা-মাকে একসঙ্গে দেখতে চাইতো।

অবশেষে দুই কন্যা সন্তানের মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে ব্যথা ও অভিমান ভুলে দম্পতি ফের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আর সেই বিয়ে পড়ানো হয় আদালত প্রাঙ্গণে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মলয় কুমার সাহা সংবাদমাধ্যমকে জানান, সন্তানদের মানসিক অবস্থা বিবেচনায় দম্পতি এক হয়েছেন। ধর্মীয় বিধান মেনে আদালত চত্বরে তাদের ফের বিয়ে সম্পন্ন হয় এবং তারা সংসার শুরু করেছেন।

২০১৭ সালে পারিবারিকভাবে এই দুজনের বিয়ে হয়। তারা দুজনই উচ্চশিক্ষিত। দুজনই উচ্চপদে চাকরি করেন। বিয়ের পর নারীর বাবার বাড়িতে তাদের সংসার শুরু হয়। পরে ঢাকার একটি ভাড়া বাসা নিয়ে থাকা শুরু করেন। বিয়ের এক বছরের মাথায় তাদের কন্যাসন্তানের জন্ম।

নারীর ভাষ্য, বিয়ের পর তাদের সংসার ভালোই চলছিল। স্বামী যৌতুক চেয়েছিলেন। এ কারণে মেয়ের সুখের কথা ভেবে যৌতুক হিসেবে ৬ লাখ টাকা ব্যয় করে টিভি, ফ্রিজ, খাট ও আলমারি উপহার দেন তার বাবা।

মামলায় নারী অভিযোগ করেন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তার স্বামীর ভাড়া বাসায় ওঠার কয়েক মাস পর থেকে সংসারে অশান্তি শুরু হয়। ভাড়া বাসার পাশে তার ননদের বাসা ছিল। শাশুড়ি কখনো তাদের সঙ্গে, আবার কখনো মেয়ের বাসায় থাকতেন। তুচ্ছ কারণে শাশুড়ির সঙ্গে তার প্রায় সময় মনোমালিন্য হতো। এ নিয়ে স্বামী তাকে কটু কথা বলতেন। একপর্যায়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতেন স্বামী। তবু সন্তানের কথা ভেবে অত্যাচার সহ্য করে সংসার করতে থাকেন তিনি।

তালাক কার্যকরের (তিন মাস) আগে স্বামীর পরিবারের সদস্যরা তালাকের নোটিশ প্রত্যাহারের অনুরোধ করতে থাকেন। স্বামী ও তাদের স্বজনেরা নারীর কাছে অঙ্গীকার করেন, আর কখনোই শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা হবে না। স্বামীর অনুরোধ ও সন্তানের কথা ভেবে কার্যকর হওয়ার আগে নারী তালাকের নোটিশ প্রত্যাহার করে নেন। ফলে ফের শুরু তাদের নতুন জীবন।

আদালতের কাছে নারী দাবি করেন, আবার সংসার শুরুর পর থেকে কয়েক মাস তার স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক বেশ ভালো ছিল। তবে দ্বিতীয় সন্তান গর্ভে আসার পর থেকে আবারও স্বামী নির্যাতন করা শুরু করেন। তিনি এতটাই উগ্র হয়ে ওঠেন যে নির্যাতন ঠেকাতে পরিবারের অন্য সদস্যরা এগিয়ে এলে স্বামী তাঁদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করতেন।

নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আবারও স্বামীর বাসা ছেড়ে চলে যান বাবার বাসায়। ২০২১ সালের ৩০ আগস্ট তিনি আবার তাঁর স্বামীকে তালাকের নোটিশ দেন। তালাক কার্যকরও হয়। ছয় মাস পর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার দ্বিতীয় কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। স্বামী কখনো দ্বিতীয় সন্তানকে দেখতে আসেননি।

তবে এই নারীর সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তাঁর সাবেক স্বামী। সাবেক স্বামীর অভিযোগ, তাঁর মায়ের সঙ্গে স্ত্রীর বনিবনা হতো না। এ কারণে স্ত্রী প্রায় সময় তাঁর মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। একদিন রাগ করে তাঁর স্ত্রী বড় মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান। দ্বিতীয় সন্তান জন্মের পর কন্যাদের দেখতে তিনি শ্বশুরবাড়িতে গেলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে মারধর করেন। এ সময় তিনি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন দেন। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।