ঢাকা ০৮:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অস্তিত্ব রক্ষায় দৃষ্টান্ত!

ভয়েস রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০৮:৫৭:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ মে ২০২১ ১৮২ বার পড়া হয়েছে
ভয়েস একাত্তর অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ইয়াসে ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ নির্মাণে কয়রার হাজারো মানুষ : ছবি সংগৃহিত

ধর্ম, বর্ণ, রাজনীতি, পেশাগত মতভেদ ভুলে গিয়ে একছাতার তলায় দাঁড়িয়ে যে কোন অসাধ্য সাধন সম্ভব। একতা একটি মন্ত্র। একতা একটি শক্তি। ‘দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ’। একথা যুগে যুগে প্রচলিত।

ঐক্যবদ্ধ মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে এক নজির গড়লেন বাংলাদেশের খুলনার কয়রাবাসী। এর জন্য প্রয়োজন হয়েছিলো মাত্র একটি মাইকিং। তাতে বলা হয়েছিলো, ইয়াসে কয়েক শ’ মিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তা আমাদের মেরামত করতে হবে। ২৮ মে সকাল থেকেই তা শুরু করা হবে।

আর কিছু বলার প্রয়োজন হয়নি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে খুঁজে আনতে হয়নি। সূর্য তখনও ওঠেনি। খুলনার কয়রা উপজেলার মঠবাড়ি এলাকার শাকবাড়িয়া নদীর উত্তর মঠবাড়ি বাঁধ মেরামতে হাত লাগাতে জড়ো হলেন, কয়েক হাজার মানুষ। তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক নারীও ছিলেন।

কর্মীর হাতেরতো পরিচয় একটাই সে কর্মী। লেগে গেলেন বাধ মেরামতে। হৈ হৈ রবে শক্তি যুগিয়ে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। অকল্পনীয়, ভাবা যায় না। ঐক্যের শক্তিকেতো কামান-ট্যাঙ্ক ধমিয়ে রাখতে পারেনি কোন কালে। তার প্রমাণতো ভুরি ভুরি। তেমনি ঠেকাতে পারেনি কয়রার জনমানুষকেও।

ধর্ম, বর্ণ, রাজনীতি, পেশাগত ভেদাভেদ ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শাকবাড়িয়া নদীর উত্তর মঠবাড়ি বাঁধ মেরামতে হাত লাগান স্থানীয় মানুষ।

চলুন ঘুরে আসা যাক কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের পবনা এলাকার ভেঙে যাওয়া বাঁধ। জানা গেল যেখানে একটি আহ্বান জানানো হয়েছিলো, আপনারা সবাই ভোর বেলা ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধের কাছে চলে আসুন। বিপদে পাশে দাঁড়ান।

এক মাইকিংয়েই পরদিন ভোরবেলা কয়রা উপজেলা সদর ও মহারাজপুর ইউনিয়নের নির্ধারিত স্থানটি লোকারণ্য হয়ে যায়। মাথায় গামছা বেঁধে কাতারে কাতারে মানুষ তৈরি। যেমন যুদ্ধের ময়দানের দামামা বেজে ওঠেছে। এযে জীবন যুদ্ধ। ততক্ষণে ভাটার টান শাকবাড়িয়া নদীতে।

মাইকে এটি নির্দেশনা ভেসে আসলো। আসুন এবারে সবাই কাজে হাত লাগাই। এরপরই শুরু হলো পবনা এলাকার ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতের সংগ্রাম। কেউ বস্তায় মাটি ভরছেন, আবার কেউ মাটির বস্তা নিয়ে ফেলছেন ভাঙা বাঁধের স্থানে।

কেউবা ব্যস্ত বাঁধ ও খুঁটি পোঁতার কাজে। বসে ছিলেন না নারীরাও। ঘর্মাক্ত, ক্লান্ত মানুষকে জল খাইয়ে, এটা-ওটা এনে দিয়ে সাহায়তা করেন তাঁরাও। টানা দুপুর পর্যন্ত কাজ করে ফের জোয়ার আসার আগেই বাঁধ মেরামত কাজ শেষ করে নজির গড়েন এলাকাবাসী।

নদীভাঙনের ফলে প্রায় ৮ হাজার পরিবার জলবন্দী ছাড়াও হাজার পাঁচেক বিঘার মাছের ঘের ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সাগরের নোনা জল।

মসজিজে জল তাই  রাস্তায় দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় : ছবি সংগৃহিত

বাঁধ মেরামত এবং রক্ষাবেক্ষণা থাকা সংশ্লিষ্ট সংস্থা যে কাজটি করতে গেলে অনেক দিন সময় নিতো, সেখানে এলাকার মানুষ তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মাত্র পাঁচ ঘন্টায় ভেঙ্গে যাওয়া বাধ মেরামতে সক্ষম হন।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে স্বাভাবিক চেয়ে অধিক উচ্চতার জোয়ারে কয়রা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে অন্তত ১০টি স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এতে প্লাবিত হয় প্রায় অর্ধশত গ্রাম। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মহারাজপুর ইউনিয়নে। ইউনিয়নের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কপোতাক্ষ নদের দশালিয়া ও হোগলা এলাকায় বাঁধ ভেঙে গিয়েছিলো।

গলা ডোবানো জলভেঙ্গে বিশুদ্ধ খাবার জল সংগ্রহ : ছবি সংগৃহিত

একারণে গোবিন্দপুর, দিয়াড়া, দশালিয়া, মহারাজপুরসহ অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রতিদিন জোয়ারের জলে তলিয়ে যেতে থাকে নতুন নতুন এলাকা। বাগালী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মধ্যেও জল ঢুকে পড়ে। অবশেষে জলমগ্নতার কবল থেকে গ্রাম ও বাড়িঘর রক্ষায় বাঁধ হাত মেরামতে হাত লাগান স্থানীয় আমজনতা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

অস্তিত্ব রক্ষায় দৃষ্টান্ত!

আপডেট সময় : ০৮:৫৭:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ মে ২০২১

ইয়াসে ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ নির্মাণে কয়রার হাজারো মানুষ : ছবি সংগৃহিত

ধর্ম, বর্ণ, রাজনীতি, পেশাগত মতভেদ ভুলে গিয়ে একছাতার তলায় দাঁড়িয়ে যে কোন অসাধ্য সাধন সম্ভব। একতা একটি মন্ত্র। একতা একটি শক্তি। ‘দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ’। একথা যুগে যুগে প্রচলিত।

ঐক্যবদ্ধ মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে এক নজির গড়লেন বাংলাদেশের খুলনার কয়রাবাসী। এর জন্য প্রয়োজন হয়েছিলো মাত্র একটি মাইকিং। তাতে বলা হয়েছিলো, ইয়াসে কয়েক শ’ মিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তা আমাদের মেরামত করতে হবে। ২৮ মে সকাল থেকেই তা শুরু করা হবে।

আর কিছু বলার প্রয়োজন হয়নি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে খুঁজে আনতে হয়নি। সূর্য তখনও ওঠেনি। খুলনার কয়রা উপজেলার মঠবাড়ি এলাকার শাকবাড়িয়া নদীর উত্তর মঠবাড়ি বাঁধ মেরামতে হাত লাগাতে জড়ো হলেন, কয়েক হাজার মানুষ। তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক নারীও ছিলেন।

কর্মীর হাতেরতো পরিচয় একটাই সে কর্মী। লেগে গেলেন বাধ মেরামতে। হৈ হৈ রবে শক্তি যুগিয়ে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। অকল্পনীয়, ভাবা যায় না। ঐক্যের শক্তিকেতো কামান-ট্যাঙ্ক ধমিয়ে রাখতে পারেনি কোন কালে। তার প্রমাণতো ভুরি ভুরি। তেমনি ঠেকাতে পারেনি কয়রার জনমানুষকেও।

ধর্ম, বর্ণ, রাজনীতি, পেশাগত ভেদাভেদ ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শাকবাড়িয়া নদীর উত্তর মঠবাড়ি বাঁধ মেরামতে হাত লাগান স্থানীয় মানুষ।

চলুন ঘুরে আসা যাক কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের পবনা এলাকার ভেঙে যাওয়া বাঁধ। জানা গেল যেখানে একটি আহ্বান জানানো হয়েছিলো, আপনারা সবাই ভোর বেলা ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধের কাছে চলে আসুন। বিপদে পাশে দাঁড়ান।

এক মাইকিংয়েই পরদিন ভোরবেলা কয়রা উপজেলা সদর ও মহারাজপুর ইউনিয়নের নির্ধারিত স্থানটি লোকারণ্য হয়ে যায়। মাথায় গামছা বেঁধে কাতারে কাতারে মানুষ তৈরি। যেমন যুদ্ধের ময়দানের দামামা বেজে ওঠেছে। এযে জীবন যুদ্ধ। ততক্ষণে ভাটার টান শাকবাড়িয়া নদীতে।

মাইকে এটি নির্দেশনা ভেসে আসলো। আসুন এবারে সবাই কাজে হাত লাগাই। এরপরই শুরু হলো পবনা এলাকার ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতের সংগ্রাম। কেউ বস্তায় মাটি ভরছেন, আবার কেউ মাটির বস্তা নিয়ে ফেলছেন ভাঙা বাঁধের স্থানে।

কেউবা ব্যস্ত বাঁধ ও খুঁটি পোঁতার কাজে। বসে ছিলেন না নারীরাও। ঘর্মাক্ত, ক্লান্ত মানুষকে জল খাইয়ে, এটা-ওটা এনে দিয়ে সাহায়তা করেন তাঁরাও। টানা দুপুর পর্যন্ত কাজ করে ফের জোয়ার আসার আগেই বাঁধ মেরামত কাজ শেষ করে নজির গড়েন এলাকাবাসী।

নদীভাঙনের ফলে প্রায় ৮ হাজার পরিবার জলবন্দী ছাড়াও হাজার পাঁচেক বিঘার মাছের ঘের ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সাগরের নোনা জল।

মসজিজে জল তাই  রাস্তায় দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় : ছবি সংগৃহিত

বাঁধ মেরামত এবং রক্ষাবেক্ষণা থাকা সংশ্লিষ্ট সংস্থা যে কাজটি করতে গেলে অনেক দিন সময় নিতো, সেখানে এলাকার মানুষ তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মাত্র পাঁচ ঘন্টায় ভেঙ্গে যাওয়া বাধ মেরামতে সক্ষম হন।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে স্বাভাবিক চেয়ে অধিক উচ্চতার জোয়ারে কয়রা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে অন্তত ১০টি স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এতে প্লাবিত হয় প্রায় অর্ধশত গ্রাম। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মহারাজপুর ইউনিয়নে। ইউনিয়নের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কপোতাক্ষ নদের দশালিয়া ও হোগলা এলাকায় বাঁধ ভেঙে গিয়েছিলো।

গলা ডোবানো জলভেঙ্গে বিশুদ্ধ খাবার জল সংগ্রহ : ছবি সংগৃহিত

একারণে গোবিন্দপুর, দিয়াড়া, দশালিয়া, মহারাজপুরসহ অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রতিদিন জোয়ারের জলে তলিয়ে যেতে থাকে নতুন নতুন এলাকা। বাগালী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মধ্যেও জল ঢুকে পড়ে। অবশেষে জলমগ্নতার কবল থেকে গ্রাম ও বাড়িঘর রক্ষায় বাঁধ হাত মেরামতে হাত লাগান স্থানীয় আমজনতা।