অসম্প্রদায়িক চেতনার কবি কাজী নজরুলের ‘জন্মজয়ন্তীতে লাখো প্রাণের শ্রদ্ধা’

- আপডেট সময় : ০৮:৪৫:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মে ২০২১ ২৭১ বার পড়া হয়েছে
সাগরে অলক্ষুনে ঝড়! এর প্রভাবে সোমবার রাত থেকেই ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি। মঙ্গলবার ১১ই জ্যেষ্ঠ। বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী। সকাল থেকেই ফুলের তোড়া হাতে পায়ে পায়ে সমাধিস্থলে পৌছাতে শুরু করেছে কবিভক্তরা। সাংস্কৃতি মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী এম এ খালিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. আকতারুজ্জামান, বাঁশরী, নজরুল ইনস্টিটিউট, হাক্কানি মিশন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রিয় কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
হাক্কানি মিশন কবিকে একজন সুফি সাধক মানেন। তাই সমাধিতে গিলাপ দিয়ে ডেকে দেন রীতি অনুযায়ী। অবশ্য পরে তা খুলে নেওয়া হয় প্রশাসনের তরফে।
মসজিদের ঐ পাশে আমায় কবর দিও ভাই—। কবির কথা অক্ষরে াক্ষরে পালিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের আঙ্গিণার সুশিতল ছায়াঘেরা পরিবেশে কবির সমাধি। দূরদুরান্ত থেকে কবির সমাধিতে বছরজুড়েই মানুষ আসেন। করোনাকালীন সময়ে সেভাবে ভ্রমনকারীরা আসতে পারছেন না।
কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি। ১৮৯৯ সালের এই দিনে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের চুরুলিয়া গ্রামে তার জন্ম। তার ডাকনাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি মূলত প্রেম-দ্রোহ, সাম্য-মানবতা ও শোষিত মানুষের মুক্তির কবি। বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের অকুতোভয় সৈনিক নজরুল সাহিত্যের শাখা-প্রশাখায় ছিলো তার বিচরণ। বিচক্ষণ ও বাস্তববাদি কবি ছিলেন নজরুল। কবিতা, গল্প-উপন্যাস, হাম-নাত, শ্যামা সংঙ্গীত কোন বাণী আসেনি তার কলমে?
এই ভাবনা থেকেই বলতে হয়, ‘তবু আমারে দেবনা ভুলিতে।’ করোনা কালেও জাতীয় কবির জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে হাজারো মানুষের পথচারণায় মুখর ছিলো তার সমাধিস্থল। তবে সবটাই হয়েছে, সাবধানতা অবলম্বন করেই। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম এবং টেলিভিশনে এদিনে বিশেষ অনুষ্ঠান মালার আয়োজন রয়েছে। বিশেষ নিবন্ধন প্রকাশ করেছে সংবাদপত্রগুলো ।
বাচিক শিল্পী পিকুলীশা মৈত্র
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কবির জন্মজয়ন্তীতে বাণী দিয়েছেন। মূলত বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই কবিকে স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।
কবি নজরুলকে বিশ্বে তুলে ধরার প্রয়াস থেকেই কাজ করে চলেছে ‘বাঁশরী’ প্রতিষ্ঠানটির নামের প্রতিষ্ঠানটি। মূলত নজরুল সম্পর্কিত এটি একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি নজরুলের চেতনাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেবার তাগিদ থেকেই কাজ করে চলেছে বাঁশরী। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার খালেকুজ্জামান পেশায় মূলত একজন প্রকৌশলী। কিন্তু তার গোটা দেহটাই যেন নজরুল আদর্শ দিয়ে মোড়ানো। খালেকুজ্জামান জানালেন, বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ পূর্ণ হবে ডিসেম্বর নাগাদ। জানুয়ারিতে বাংলাদেশ-ভারতের বিভিন্ন স্থানে লাখো কন্ঠে বিদ্রোহী কবিতা পাঠ আয়োজন করবেন তারা।

এর আগে কয়েক বছর আগে বিদ্রোহী কবিতা নিয়ে বাংলাদেশে এক নতুন ধারার আয়োজন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন খালেকুজ্জামান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ময়দানে লাখো কন্ঠে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা পাঠ ছিলো উপমহাদেশে এক নজির গড়া আযোজন। যা করতে পারে বাংলাদেশ। বাংলাদেশই পারে যে কোন অসম্ভবকে সম্ভব করতে। বাঁশরী তার অসম্প্রদায়িক যাদুর বাঁশি বাজিয়ে হাজারো মানুষকে চেতনা ও মানবতার কবি কাজী নহরুল ইসলামের গানকে শুদ্ধভাবে শেখার জন্যও প্রচারাভিযানে নেমেছে। খালেকুজ্জামান জানালেন, তারা অনলাইন ক্লাস শুরু করবেন কবি জন্মজয়ন্তী থেকেই। যেখানে বিশ্বব্যাপী নজরুল প্রেমি মানুষ নিখচরায় শুদ্ধ নজরুল সঙ্গীত শিখতে পারবেন এবং কবির বিষয়ে বিশদ জানতে পারবেন।
তাছাড়া বছরজুড়েই বাঁশরী তাদের কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছেন। কবি নানা দিক নিয়ে প্রায় সময়েই অনুষ্ঠানের আয়োহন থাকছে। খালেকুজ্জামান মনে করেন, কাউ না কাউতো কাজটি এগিয়ে নিতেই হবে। আর এটিতো আমাদের দায়িত্বেরই একটা অংশ বলতে পারেন।
নজরুল জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ তথ্যচিত্র ‘তবু আমারে দেব না ভুলিতে’। সুজন আহমেদের গ্রন্থনা ও নির্মাণে এই তথ্যচিত্রটিতে তুলে ধরা হয়েছে কাজী নজরুল ইসলামের শৈশব, শিক্ষাজীবন, সাহিত্যজীবন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, সঙ্গীতজীবনসহ সমগ্র জীবনচর্চা।