অন্তর্বর্তী সরকার কেন যুদ্ধবিমান কিনছে, চীনের ২০টি জে-১০ সিই ক্রয়ে বিতর্ক
- আপডেট সময় : ০৮:৩২:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫ ১২৯ বার পড়া হয়েছে
চীনের তৈরি ২০টি জে-১০ সিই মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান কেনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ লক্ষ্যে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ফেসবুক প্রোফাইলে এক স্ট্যাটাসেও সম্প্রতি এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চীনের তৈরি ২০টি জে -১০ সিই মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। চলতি ২০২৫-২৬ এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরে এই চুক্তিটি বাস্তবায়নের আশা করা হচ্ছে বলেও এই স্ট্যাটাসে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সাম্প্রতিক একটি সিদ্ধান্ত সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। চীনের তৈরি ২০টি জে-১০ সিই মাল্টি-রোল যুদ্ধবিমান কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার আনুমানিক ব্যয় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।
দেশীয় একাধিক সূত্র এবং সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ফেসবুক স্ট্যাটাসে এই চুক্তির কথা প্রকাশ্যে আসে; চুক্তি বাস্তবায়ন ও অর্থসংস্থান চলতি ২০২৫-২৬ ও ২০২৬-২৭ অর্থবছরে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
সরকারি বরাত অনুযায়ী, কেনাকাটার পদ্ধতি হতে পারে সরাসরি ক্রয় অথবা জিটুজি চুক্তির মাধ্যমে। তবে প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে, নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস বাকি অবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে প্রতিরক্ষা খাতে এমন বড় স্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ কতটা যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য?

সামরিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এই বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন। মেজর জেনারেল (অব.) আ.ন.ম. মুনীরুজ্জামান প্রতিরক্ষা সক্ষমতা রক্ষা ও ন্যূনতম আকাশ প্রতিরক্ষা বজায় রাখাকে যুদ্ধবিমানের প্রয়োজনীয়তার কারণ হিসেবে স্বীকার করেছেন।
তবে তিনি ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা এক্ষেত্রে নীতিগত উদ্বেগও তোলেন এমন বৃহৎ ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নির্বাচন-আগত অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে না রেখে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের অধীনে নেওয়া উচিত। তাদের যুক্তি: দুই দশমিক দুই বিলিয়ন ডলারের মতো একটি বহুবর্ষীয় অর্থায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ-ভার পরবর্তী সরকারের বাজেটে বর্ধিত চাপ সৃষ্টি করবে।
সমালোচকরা বলছেন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, চুক্তির মূল্যায়ন, বাংলাদেশি দক্ষতা উন্নয়ন, অংশীদারিত্ব, ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের শর্তাবলী কতটা পরিস্কার করা হয়েছে, সে সব বিষয়ের উপর পর্যাপ্ত সুরাহা আছে কি না। বিশেষত নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে প্রতিরক্ষা খরচের সিদ্ধান্ত যদি প্রশাসনিক স্বীকৃতি ও আইনগত যাচাই-বাছাই ছাড়া নেওয়া হয়, তা রাজনীতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
অন্যদিকে সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদ্যমান ফ্লাইট বহরে থাকা বিমানগুলোর বেশিরভাগই পুরনো মডেলের; আধুনিককরণ না করলে আকাশসীমা রক্ষায় দুর্বলতা তৈরি হতে পারে। তাই দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষা কৌশলের অংশ হিসেবে সামরিক সক্ষমতা হালনাগাদ করাও জরুরি।
সূত্র মতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত মার্চে চীন সফরে অংশ নেন; রাজনৈতিক নেতৃত্বের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ও কূটনৈতিক যোগাযোগ এ ক্রয়ের গতিকে ত্বরান্বিত করেছে বলেও মত আছে।
রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা ও সামরিক আধুনিকীকরণকে কীভাবে নির্বাচন-আগত রাজনীতির সময়সীমার মধ্যে সামঞ্জস্য করা যায়, এবং এমন ব্যয় বোঝা কাদের কাঁধে থাকা উচিত। এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই এখনও পুরোপুরি মেলেনি, তাই জে-১০ ক্রয় ইস্যু সামনে রেখে জাতীয় পর্যায়ে আরও সরস ও স্বচ্ছ আলোচনা চালানো প্রয়োজন।




















